উন্নত দেশগুলির মতো আমাদের দেশেও গড়ে উঠেছে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প। বর্তমানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশনের অধীনে দেশে গড়ে উঠেছে ৯টি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ইউনিটের সংখ্যা ৩১ এবং উৎপাদনক্ষমতা ৫৭৮০ মেগাওয়াট। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প হল : তারাপুর অ্যাটোমিক পাওয়ার স্টেশন, কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট প্রভৃতি। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা — এই রাজ্যগুলিতে গড়ে উঠেছে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প।
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। এক সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে রাশিয়ার সহায়তায় পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনবিক্ষোভে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা উচিত কিনা তা নিয়ে অবশ্য বিতর্কের শেষ নেই। বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ অবশ্য পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের সপক্ষে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। পরমাণু বিকিরণের ফলে এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আশঙ্কা রয়েছে, সেটাও অমূলক বলে তিনি মনে করেন। তা ছাড়া কয়লার ভাণ্ডার ক্রমশ কমে আসায় বিকল্পের সন্ধান করতেই হয় এবং সে ক্ষেত্রে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
দেশে বিদ্যুতের এক অন্যতম উৎস হল জলবিদ্যুৎ। জলের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। গ্রীস্মের দাবদাহে পৃথিবীর জল বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে ওঠে। সৃষ্টি হয় মেঘপুঞ্জ এবং বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ে, নদী নালা, সরোবর পুষ্ট হয়। জলস্রোত নিম্নমুখী হয়ে প্রবল ধারায় যখন বইতে থাকে তখন তৈরি হয় কাইনেটিক এনার্জি। এই এনার্জিকে কাজে লাগিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে তৈরি করা হয় বিদ্যুৎ। অবশ্য এ ভাবে স্বল্প পরিমাণ বিদ্যুৎই তৈরি করা সম্ভব। অধিক পরিমাণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সাধারণত কোনও নদীর উৎসমুখে বা তার কাছাকাছি এলাকায় বিশালাকায় জলাধার নির্মাণ করা হয়। এই জলাধারকে বলা হয় বাঁধ বা ব্যারেজ (অবশ্য এই দু’টির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে)।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/27/2019