বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর গ্রামাঞ্চলে এই সংকট তো আরও তীব্র। রাতে বাড়িগুলো অন্ধকারে ডুবে থাকে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছেলও লোডশেডিংয়ের দাপটে আলো জ্বলে সামান্যই। তবে সংকট যে গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ তা নয়। শহরাঞ্চলও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয় এবং শহরে রাতের আলোর সমুদ্রের মধ্যেও অন্ধকারে ডুবে থাকেন ৬ শতাংশ মানুষ। অবশ্য গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনার শেষ নেই। ২০০৫ সালের এপ্রিলে চালু করা হয় রাজীব গান্ধী গ্রামীণ বৈদ্যুতীকরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করে সেখানকার সমস্ত মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। একই সঙ্গে গরিবিরেখার নীচে যে সব পরিবার আছে তাদের বাসস্থানে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। এই প্রকল্পের পরিকাঠামো নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের পরিমাণ ৯০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে ১০৬১১২টি বিদ্যুৎহীন গ্রাম এবং ২৭৩৩২৮টি আংশিক বিদ্যুৎহীন গ্রামে বৈদ্যুতীকরণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং গরিবিরেখার নীচের ২০২.৬০ লক্ষ পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিদ্যুতের অভাবে এবং লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে, কলকারখানার উৎপাদন কমছে, সেচের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং ফলে কৃষি উৎপাদন কমছে। ২০০৯ সালে দেশে বার্ষিক মাথাপিছু গড় বিদ্যুৎ গ্রহণের পরিমাণ ছিল গ্রামাঞ্চলে ৯৬ কিলোওয়াট আওয়ার এবং শহরাঞ্চলে ২৮৮ কিলোওয়াট আওয়ার। যাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রেই এই পরিসংখ্যান। অন্য দিকে সারা পৃথিবীর নিরিখে মাথাপিছু গড় বিদ্যুৎ গ্রহণের পরিমাণ ২৬০০ কিলোওয়াট আওয়ার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে এই পরিমাণটা হল ৬২০০ কিলোওয়াট। অবশ্য জানুয়ারি ২০১২-র একটি প্রতিবেদনে এই সংখ্যাটা ৭৭৮ কিলোওয়াট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রেও আমরা পৃথিবী থেকে এবং ইউরোপীয় উন্নত দেশগুলি থেকে যে অনেক যোজন পিছিয়ে রয়েছি তা সহজেই বোঝা যায়।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019