বিদ্যুৎ ভারতীয় অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। স্বাধীনতার সময়ে ১৯৪৭ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১.৪৭ গিগাওয়াট। বহুগুণ বেড়ে ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৩ গিগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উৎস (প্রায় ৭১ শতাংশ) হল কয়লা। এ ছাড়া জল (১১.৭ শতাংশ), প্রাকৃতিক গ্যাস (৭.৪ সতাংশ), পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস (৬শতাংশ) এবং পরমাণু শক্তি থেকে (৩.৪ শতাংশ) বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বার্ষিক পরিমাণ ৯৬ হাজার ৩৭০ কোটি কিলোওয়াট। প্লান্ট লোড ফ্যাক্টর বা পিএলএফ কয়লার ৫৮ শতাংশ, জলবিদ্যুৎ ৩১ শতাংশ, গ্যাসে ১৯.৮ শতাংশ, পরমাণ বিদ্যুতে ৭৭.৮ শতাংশ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে ২৩.৩ শতাংশ। পিএলএফের কম হারের পিছনে কারিগরি ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। পরিবহনজনিত ক্ষতির হার ২৩.৭ শতাংশ। উন্নত দেশগুলিতে এই হার ৯ শতাংশের মধ্যে থাকে। বহু রাজ্যেই এখনও শক্তি ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। গৃহস্থালি ও কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে লোডশেডিংয়ের প্রথাকেই তারা পছন্দ করে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিল্পক্ষেত্রে সর্বাধিক ৪৫ শতাংশ, গৃহস্থালিতে ২১ শতাংশ, কৃষিক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ, বাণিজ্য ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। দেশে মোট জোগানের পরিমাণ ৮৫ হাজার ৩০০ কোটি কিলোওয়াট। কৃষিক্ষেত্রে দেশের শ্রমশক্তির ৫০ শতাংশ নিয়োজিত। ভারতীয় অর্থনীতিতে এই ক্ষেত্রের অবদানই সব চেয়ে বেশি। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ জোগানের বৃদ্ধির হার কম। ২০০৫ সালের তুলনায় বিদ্যুতের ব্যবহার শিল্পক্ষেত্রে ১২৯ শতাংশ, গৃহস্থালির কাজে ৭০ শতাংশ, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ এবং কৃষিক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতি ৮ থেকে ৯ শতাংশ বার্ষিক বিকাশের প্রত্যাশিত পথে চললে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়। এর ফলে ভারতীয় শক্তি ক্ষেত্রের উপর চাপ আরও বাড়বে। প্রথাগত জ্বালানি সম্পদের স্বল্পতা এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণের সমস্যা আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা, কারণ আমাদের জ্বালানির মূল উৎস হল কয়লা, যা দেশের মোট গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের হারকে ৬৫.৪ শতাংশে পৌঁছে দিয়েছে। জ্বালানি ক্ষেত্রে যার মূলে আছে কয়লার ব্যবহার।
ইকোনোমেট্রিক্স মডেল ও এ সংক্রান্ত তথ্য বলছে, ৫ শতাংশ হারে বেড়ে ২০৪৫ সালে আমাদের বিদ্যুতের ব্যবহার দাঁড়াবে ৫ লক্ষ ৬ হাজার কোটি কিলোওয়াটে। প্রধান ব্যবহারকারী হবে শিল্প, গৃহস্থালি, বাণিজ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্র। কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে অত্যন্ত শ্লথ হারে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের জোগান যথেষ্ট না হওয়ায় দেখা দেবে ঘাটতি।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020