ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে পাঁচ গুণ। কয়লা ব্যবহারের ফলে গ্যাসের নির্গমণ হবে চার গুণ বেশি। আরও কয়লা আমদানি করতে হবে যার জেরে প্রথাগত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমশই খরচাসাপেক্ষ হয়ে উঠবে। জলবিদ্যুৎ অবশ্যই একটি বিকল্প। বায়ু ও সৌরশক্তিকেও বর্তমান ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত করা গেলে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে, অথচ পরিবেশের উপর চাপ পড়বে না। ইকনোমেট্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বর্তমান ক্ষমতার সঙ্গে বার্ষিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি সহ আরও ১০ শতাংশ জলবিদ্যুৎ, বার্ষিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি সহ আরও ১০ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ এবং ১ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি সহ আরও ৫ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন যোগ করতে পারলে আমাদের ভবিষ্যতের যাবতীয় বিদ্যুতের চাহিদা মিটে যাবে।
বায়ু থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইতিমধ্যেই কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতিযোগী। কয়লার আমদানি বাড়তে থাকায় ভর্তুকি ও বাইরের অন্যান্য খরচা না ধরেও বিদ্যুতের খরচ প্রতি কিলোওয়াটে ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। গ্রিডের মাধ্যমে গ্রামগুলিকে সংযুক্ত করা বা লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে কাজ এখনও বাকি — তারও কোনও দিশা প্রচলিত পথে পাওয়া সম্ভব নয়। সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মাধ্যমেই একমাত্র এগুলির সমাধান হতে পারে, একই সঙ্গে মিটতে পারে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের সমস্যাও।
সৌরশক্তি আমাদের জ্বালানির মুখ্য উৎস হয়ে উঠতে পারে, যদি আমরা নীচের বিষয়গুলির উপর জোর দিই—
সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলসেচের ক্ষেত্রে তরল জ্বালানিতে চলা পাম্পগুলির তুলনায় সৌরশক্তি চালিত পাম্পগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক কম। ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া সত্ত্বেও সৌরশক্তির উৎপাদনের খরচ ডিজেলের মাধ্যমে উৎপাদনের খরচের অর্ধেক। সৌরশক্তি চালিত পিভি পাম্পগুলি চালাতে কোনও খরচ নেই, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম, এর কোনও তদারকিরও প্রয়োজন হয় না। রাজস্থান সরকার ২০১১ সালে গ্রামীণ এলাকায় ৫১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ১০ হাজার কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে সৌরশক্তি চালিত পাম্প দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৬ হাজারটি পাম্প বসানো হয়েছে। পাম্পের দামের ৮৬ শতাংশ দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কৃষককে বাকি ১৪ শতাংশ এবং প্রযুক্তি সরবরাহককে খরচ দিতে হচ্ছে। পাম্প বসানো এবং প্রথম পাঁচ বছর তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রযুক্তি সরবরাহকেরই। সৌরশক্তি চালিত পাম্পের প্রধান তিনটি সুবিধা হল — ডিজেলের ব্যাপক সাশ্রয়, বৈদ্যুতিক গ্রিডের বাধ্যবাধকতা থেকে স্বাধীনতা এবং জলের সুদক্ষ ব্যবহার। ভর্তুকি পাওয়ার আবশ্যক শর্ত হিসাবে কৃষককে বিন্দু বিন্দু জলসেচ ব্যবস্থা ও জল সংরক্ষণের জন্য একটি জলাশয় গড়ে তুলতে হবে। সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, কৃষকদের অধিকাংশেরই এই পাম্প চালাতে কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।
তবে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই জলসেচের ব্যবহার হয়। অন্য সময়ে সৌর প্যানেলগুলি বিনা কাজে পড়ে থাকে। এই কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে রূপায়ণের উদ্যোগ নিলে পাম্পগুলিকে অন্য সময়ে কাজে লাগিয়ে গৃহস্থালির বিদ্যুতের প্রয়োজনও মেটানো সম্ভব।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020