২০০৫ সালের আগে ভারতের শক্তি ক্ষেত্রের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। বিদ্যুতের অদক্ষ ব্যবহারে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে চাহিদা ও জোগানের ফারাক ২৫ শতাংশ ছাপিয়ে যেত। শক্তি মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সজাগ হলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা সম্ভব। ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার শক্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করে। শক্তি সম্পদের সুদক্ষ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি পরিকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে এই বিধি। সর্বশক্তি দিয়ে সংরক্ষণের কাজ করলে ২০৪৫ সাল নাগাদ আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে ৩ লক্ষ ৮ হাজার কোটি কিলোওয়াটে দাঁড়াতে পারে। এই আইনের প্রধান পাঁচটি সংস্থান হল, উপভোক্তাদের সুনির্দিষ্ট করা, সঠিক মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার, শক্তি সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধি ইসিবিসি মেনে চলা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং শক্তি সংরক্ষণ তহবিল স্থাপন। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার আওতায় যে সব কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে তা হল, চাহিদা নিয়ন্ত্রণ, বচত ল্যাম্প যোজনা, রাজ্যস্তরে শক্তি সংরক্ষণ সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করা, রাজ্যস্তরে তহবিল গঠন প্রভৃতি। এর সুফল ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। সিএফএল ও এলইডি ব্যবহার করে অনেক শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদা বেশ কিছুটা কমেছে। নতুন ভবন নির্মাণের সময় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কিছু বাড়িতে। ইসিবিসি বিধি মেনে চলা এখনও বাধ্যতামূলক করা না হলেও যে সব ভবনে এই বিধি মানা হয়েছে সেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একই ভাবে কৃষিক্ষেত্রে পাম্প ও শিল্পক্ষেত্রে নানা নতুন যন্ত্রপাতির প্রয়োগে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমেছে ৩৭ শতাংশ।
ইলেকট্রোমেট্রিক পূর্বাভাস বলছে, আমরা যদি শক্তি সংরক্ষণ ব্যবস্থার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বাঁচাতে পারি, তা হলে ২০৪৫ সাল নাগাদ আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদা হ্রাস পয়ে ৩ লক্ষ ৮ হাজার কোটি কিলোওয়াটে দাঁড়াবে। সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হলে চাহিদার পরিমাণ পৌঁছবে ৫ লক্ষ ৬ হাজার কোটি কিলোওয়াটে। সব থেকে বেশি চাহিদা হবে শিল্প, গৃহস্থালি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ২০০৬ সালে যে কৃষি ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ চাহিদা মোট উৎপাদনের ২২ শতাংশ, সেই কৃষি ক্ষেত্রেই চাহিদা ২০৪৫ সালে নেমে আসবে ৪ শতাংশে। বাণিজ্য ক্ষেত্রের চাহিদা ওই সময়ে ২২ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের চাহিদা ১৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020