দেশে মাটির তলায় জমা কয়লার কতটা তোলা সম্ভব তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। একই কথা কয়লার গুণমান নিয়ে। গ্রাহকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ারও নানা ঝক্কিঝামেলা। এক সময় ভাবা হত ভারতের কয়লা সম্পদ অঢেল। ২০০৯-এর ১ এপ্রিল একটি হিসেবে বলা হয় দেশে ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়লার পরিমাণ ছিল ২৬ লক্ষ ৭২ হাজার ১০০ কোটি টন। ইদানীং অবশ্য সবাই একমত, সে কয়লার সবটা তোলা যাবে না। এর মধ্যে পড়ে সংরক্ষিত অঞ্চল, বন বা জলাশয়ের নীচে কয়লা। গত ২০০ বছরে খনি থেকে তোলা কয়লা হিসেব থেকে বাদ পড়বে। ১২ হাজার মিটারের নীচে কয়লা উত্তোলন কারিগরি দিক থেকে দুরূহ। খরচেও পোষাবে না। অধুনা এবং নিকট ভবিষ্যতে তিনশো মিটারের বেশি নীচে কয়লা তোলার কথা ভাবা অবাস্তব। কোল ইন্ডিয়া ২০১০-এর ১ এপ্রিল খসড়া রেড হেরিং প্রসপেক্টাসে জানিয়েছে, সংস্থার উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ২ কোটি ১০ লক্ষ টন। বাজারে শেয়ার বা বন্ড ছাড়ার আগে সব সংস্থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক তথ্য জানিয়ে এই প্রসপেক্টাস সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র কাছে জমা দিতে হয়। ভূতত্ত্ব, কারিগরি ও অর্থনীতির দিক বিবেচনা করে এখন আর বলা যায় না যে, দেশে দেদার কয়লা। বর্তমান হারে তোলা হলে কয়লা ফুরিয়ে যাবে ৩০-৪০ বছরে (বাত্রো ও চাঁদ ২০১১)। ভারতের কয়লায় ছাইয়ের বাড়াবাড়ি। খনিমুখ থেকে কয়লা পরিবহনেও নানা ফ্যাকড়া। এ সব ঝুটঝামেলা এড়াতে বেশ কিছু সংস্থা এখন ঝুঁকেছে আমদানি করা কয়লায়।
সব চেয়ে বেশি কয়লা আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। এর পর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইন্দোনেশিয়া ২০১১-য় কয়লার দাম বাড়িয়ে দেয়। আমদানি করা কয়লার দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে ফের মাথা চাড়া দেয় বিকল্পের ইস্যুটি।
প্রচলিত জ্বালানির ভাণ্ডার নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ চিন্তিত। কিন্তু তার যথাযথ প্রতিফলন এদেশে হয়নি। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ নিয়ে গবেষণা শুরু করা উচিত। একমাত্র নিজস্ব গবেষণাই সমস্যা সমাধানে ভারতকে স্বতন্ত্র পথ দেখাতে পারে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020