পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ভারত হাতে নিয়েছে তিন দফা কর্মসূচি। পরমাণু বিদ্যুৎ গড়া নিয়ে এগোনো অবশ্য ছেলের হাতের মোয়া নয়। ফ্যাসাদ বিস্তর। জইতাপুর ইত্যাদি জায়গায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সোচ্চার। স্থানীয় লোকজনের মনোভাব, প্রকল্প হয় হোক, তবে আমাদের এলাকার ধারে কাছে কখনওই নয়। পরমাণু প্রকল্পে সুরক্ষার বাড়তি উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে হবে। ঝুঁকি ও তা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে লোকজনের সংশয় দূর করা জরুরি। এ জন্য এ সব ব্যাপারে স্বচ্ছতা রেখে সব কিছু খোলাখুলি জানাতে হবে। বিদ্যুতের চাহিদায় ওঠানামা আছে। কোনও কোনও সময় চাহিদা ওঠে তুঙ্গে। এ ক্ষেত্রে সামাল দিতে জলবিদ্যুতের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু জল বিদ্যুৎ উৎপাদন হরেক সমস্যায় অথৈ জলে। তাই জল বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা কাগজেকলমে থেকে গেছে। তা বাস্তবে করা যায়নি। পরিবেশগত ছাড়পত্র মেলার ঝামেলা, পুনর্বাসন সমস্যা ইত্যাদি জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পক্ষে মস্ত বড় ঠেকা।
শক্তির কার্যকারিতা ভারতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। শক্তি ক্ষেত্রে প্রচুর সুযোগ আছে যা স্বল্প মেয়াদেও কাজে লাগানো যায়।
এ ছাড়া নবীকরণযোগ্য উৎস ভারতের শক্তি ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে গুরুত্ব পাবে এ ধারণা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। নবীকরণযোগ্য উৎস শক্তি নিরাপত্তার মস্ত বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন বাগে আনা কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং বিশেষত বিকেন্দ্রীভূত উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধিতেও পারে সাহায্য করত। ভারতের পক্ষে সম্ভাবনাময় এই উৎসের মধ্যে পড়ে সৌরশক্তি, সমুদ্র অঞ্চলে হাওয়াকল, জৈব জ্বালানি এবং সম্ভবত কয়লাখনির মিথেন। আগামী দিনে ভারতের পক্ষে বড় ভরসা হতে পারে হাওয়া ও সৌরশক্তির মতো নবীকরণযোগ্য উৎস। একাদশ যোজনার তুলনায় দ্বাদশ যোজনায় এই উৎস থেকে দ্বিগুণ শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য ধার্য হয়েছে। অনুকূল সরকারি নীতির দরুন এ যাবৎ সাফল্যের মাত্রা লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নয়া ও নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের হিসেব, ভারতে গড় সূর্যালোক পড়ে দিন পিছু প্রতি বর্গমিটারে ৪০৭ কিলোওয়াট আওয়ার। অর্থাৎ এ থেকে শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা প্রচুর। দেশের ১৮.৯ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে গড় সূর্যকিরণ দিনে বর্গমিটার পিছু ৫ কিলোওয়াট আওয়ারের বেশি। কিন্তু কৃষি ও শিল্পের খাঁই মেটাতে জমির উপর প্রচণ্ড চাপ থাকায় সৌরশক্তির জন্য পোড়ো ও শুখা জমি নেওয়া ছাড়া গতি নেই।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/19/2020