জাপানে কোনও জ্বালানি সম্পদ নেই। চাহিদা মেটাতে অগত্যা অগতির গতি আমদানি। এতে কিন্তু জাপানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আটকায়নি। জ্বালানিপ্রাপ্তির দিকটি বিশ্বজুড়ে বড় উদ্বেগের বিষয় তা কিন্তু নয়। বিশেষত জার্মানির মতো কিছু ইউরোপীয় দেশে নতুন ধরনের জ্বালানি ও প্রযুক্তির চলন ইদানীং শুরু হওয়ার পর। জ্বালানি ও প্রযুক্তির চড়া দাম এবং জোগানে ভূ-রাজনীতি বর্তমানে অবশ্য মাথাব্যথার কারণ বই-কি। ভারতে জ্বালানি আমদানির নিট ব্যয় ২০১১-১২তে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশ। আমদানি বেড়ে চলেছে। এটা উৎকন্ঠার কারণ। কিন্তু আমদানি করা বিপুল পরিমাণ জ্বালানি খালাস ও পরিবহনের পরিকাঠামোয় চাপ ফলেছে। জ্বালানির চড়া দাম জোগাতে অর্থনীতির হিমশিম অবস্থা। ভূ-রাজনীতির বিষয়টিকেও হেলাফেলা করা যায় না। ভারতের অধিকাংশ লেখালেখিতেই তাই আমদানি নির্ভরতা কমানোকে শক্তি নিরাপত্তার বকলম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শক্তি নিরাপত্তার ধারণায় শক্তির কার্যকারিতা ও পরিবেশ সুরক্ষিত রাখার দিকটি আরও বেশি করে ঠাঁই পেয়েছে। অধুনা, শক্তি নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ের এক জটিল সমন্বয় দরকার। দেশের জন্য শক্তি সাশ্রয়ী ও শক্তি সুরক্ষিত বিকাশের পথ ঠিক করতে শক্তির স্ট্রাটেজি, নীতি ও নিয়মকানুনের মধ্যে সাযুজ্য আনা চাই।
সরকারের সংহত শক্তি নীতি নথিতে শক্তি নিরাপত্তার সংজ্ঞায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ধরা হয়েছে। এক, ২০৩১-৩২ পর্যন্ত ৮-৯ শতাংশ বিকাশের হার বজায় রাখতে দেশের বিপুল শক্তির চাহিদা মেটানো। দুই,সব নাগরিকের আবশ্যক শক্তির চাহিদাপূরণ। এর ফলে যৎকিঞ্চিৎ বা মামুলি শক্তি ব্যবহারকারীদের সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সংস্থান করা যাবে। তিন, শক্তির জোগান নিশ্চিত করা। এই বিষয়টির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শক্তি নীতি স্থির করা হয়। আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে বর্তমানে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
শক্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গেলে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে ভাবনার পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে। এভাবে যতটা বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তত কম খরচ হবে জ্বালানি। অর্থাৎ জ্বালানি সুরক্ষার দিকে তাকিয়ে শক্তি নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020