গত শতাব্দীর নয়ের দশক। উপসাগরীয় সঙ্কটের কালো ছায়া দুনিয়া জুড়ে। এই আপৎকালে আসর জাঁকিয়ে বসল শক্তি নিরাপত্তার ধ্যানধারণাটি। ইদানীং কয়েক বছর একুশ শতকের বিশ্ব পরিস্থিতি ফের জাতীয় নিরাপত্তার চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছে। আর এ ক্ষেত্রেও মূল নিমিত্ত সেই শক্তি। পরিবহন, শিল্পোন্নয়ন, যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শক্তি অপরিহার্য। কাজে কাজেই পর্যাপ্ত শক্তি মেলার দিকে ভারতের নজর দেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে দেখতে হবে জোগানে হঠাৎ করে কোনও ঘাটতি না পড়ে। শক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষত পেট্রোপণ্যে আমরা বড় বেশি আমদানি-নির্ভর। খেয়াল রাখা দরকার রফতানিকার দেশ নির্ভরযোগ্য কিনা। হঠাৎ করে তারা যেন রফতানি বন্ধ না করে। গরিবি হটানো ও দেশে মানবোন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে আমাদের ২০৩১-৩২ পর্যন্ত ৮-১০ শতাংশ হারে বিকাশ দরকার। এই হার অর্জন ও প্রতিটি নাগরিকের শক্তির চাহিদা মেটাতে ২০৩১-৩২ সালে দেশের শক্তি চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৩৫ কোটি টন তেলের সমতূল। ২০০৩-৪-এ এই চাহিদার পরিমাণ ছিল ৩২.৭ কোটি টন। এ হিসাব খোদ যোজনা কমিশনের। এ পরিসংখ্যান থেকে পণ্য হিসাবে শক্তির গুরুত্ব আরও বেশি বোঝা যাচ্ছে। স্থায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ও জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে শক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কোন দিক থেকে বা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে শক্তি নিরাপত্তার অর্থ। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ এখনও অধরা। হেঁশেলের জন্য সম্বল সেই সাবেকি জ্বালানি। রাঁধাবাড়ার কাজে তারা চায় কাঠকুটো, ঘুঁটে কয়লার ধোঁয়া ও অন্য ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই। রেস্তর অভাব। ট্যাঁকের সাধ্যে কুলোয় অথচ গ্যাস বা বিদ্যুতের মতো সাফসুতরো শক্তি মিললে তো হাতে স্বর্গ পাওয়া। আমগেরস্থর কাছে শক্তি নিরাপত্তার জন্য এটাই যথেষ্ট। সমীক্ষায় দেখা গেছে গ্রামের মানুষ শক্তি খাতে খরচ করে তাদের বাজেটের ৬ শতাংশ। শহরে এটা কম — ৪ শতাংশ। এ ছাড়া আদ্যিকালের জ্বালানি বা শক্তিতে ধৌঁয়ার জ্বালা বেশি, তাপ বা আলো কম। মোদ্দা কথা কার্যকারিতার দিকটা ধরলে শক্তির জন্য গ্রামের লোককে শহরের থেকে ইউনিট পিছু বেশি খরচ করতে হয়।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020