গ্রামে গরিবদের কাছে বাছাবাছির কোনও সুযোগ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বা গ্যাসের সাজসরঞ্জামের জন্য একলপ্তে খরচের ভয়ে তারা পিছিয়ে যায়। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তো বিদ্যুৎ বা গ্যাস পাওয়ার তেমন কোনও সুযোগ নেই। অনেকের ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ এলেও অবস্থা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। ভোল্টেজ কম বা যখন তখন লোডশেডিংয়ের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল অবস্থা। এদের কাছে শক্তি নিরাপত্তার অর্থ নিশ্চিত বিদ্যুৎ সরবরাহ মেলা। পরিষেবার জন্য দাম চোকাতে এরা বিলক্ষণ রাজি। সরবরাহ ঠিকঠাক না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের অনেকে আরও দামি জ্বালানির দিকে ঝোঁকে। বাদবাকিরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকে কখন দয়া করে বিদ্যুৎ ফেরে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের হিসেবে ২০১১-১২ তে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ৮.৫ ও ১০.৬ শতাংশ। ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অনেক ঘরবাড়ি, দোকানপাট, কারখানা বেশি খরচে ডিজেল পুড়িয়ে বেশি পয়সায় জেনারেটর সেট দিয়ে চলত। বাড়তি খরচ তো বটেই, সেই সঙ্গে দূষণের বাড়াবাড়ি। এই প্রেক্ষিতে শক্তির কার্যকারিতা বা উপযোগিতা এবং পরিবেশও শক্তি নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৬ দেশের মধ্যে ভারত ১৩৬ (ইউএনডিপি ২০১৩)। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও পরিষেবার ব্যবস্থা করতে ভারতকে এখনও লম্বা পাড়ি দিতে হবে। এর জন্য শক্তির ব্যবহারও বাড়বে চড়চড় করে। বিষয়টি দেশে সব সময় পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে সবার চোখের সামনে তুলে ধরছে। বিশ্বায়নের যুগে জ্বালানির প্রাপ্তি ও প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকটি দেশের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বৃহত্তর আঙিনায় দেখা উচিত। আমদানির উপর বেশি নির্ভরতার অর্থ শক্তি নিরাপত্তার ব্যাপারে খামতি, এমন ভাবাটা সব সময় ঠিক নয়।
সাধারণের কাছে শক্তি নিরাপত্তার অর্থ কোনওভাবে বিদ্যুৎ অপচয় না করা। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার সংক্রান্ত কিছু ব্যবহারেরও বদল হওয়া দরকার। যেমন অকারণে আলো-পাখা চালানো। এসি চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রভৃতি অভ্যাসের দল ঘটলে অনেকটাই বিদ্যুৎ বাঁচানো সম্ভব। যা থেকে শক্তি নিরাপত্তার প্রাথমিক ধারনার সূত্রপাত হতে পারে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/21/2020