গ্যাসের আমদানি বাড়াতে এলএনজি পরিকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি। এলএনজি খালাস করার জন্য মাত্র দু’টি কেন্দ্র বা টার্মিনাল রয়েছে। দু’টিই দেশের পশ্চিম উপকূলে। রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল থেকে গ্রাহকের কাছে গ্যাস পৌঁছে দিতে বসাতে হবে পাইপলাইন। আন্তঃরাজ্য গ্যাস পাইপলাইন পাতার কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ভূ-রাজনীতি ও আঞ্চলিক অস্থিরতা এ জন্য দায়ী। তিন হাজার কিলোমিটারের মধ্যে হলে এলএনজির তুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস আমদানিতে খরচা পড়ে কম। তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত এবং ইরান-পাকিস্তান-ভারত পাইপলাইন প্রকল্প নিয়ে টালবাহানার আর ইয়ত্তা নেই। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাস কবলিত দেশের মধ্য দিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস পরিবহনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এত সব দুর্লক্ষণ তার মাঝে মাভৈ বার্তা নিয়ে আসরে হাজির শেল গ্যাস। শক্তি ক্ষেত্রে মুশকিল আসানের ভূমিকায় এর সম্ভাবনা যার পর নাই। গোলাপ তুলতে কাঁটার কথা ভোলা চলবে না অবশ্যই। শেল গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল। শেল গ্যাস তোলার ক্ষমতা গুটিকয়েক সংস্থার কুক্ষিগত। এই গ্যাসের জন্য বিপুল জলস্রোতে শিলাস্তরে ফাটল ও ফ্র্যাকিং চালাতে হয়। ভারতে ইতিমধ্যে জলের আকাল। প্রাচুর্য দুর অস্ত। মাথাপিছু হাজার ঘনমিটারের বেশি না মেলা জলের টানাটানি প্রচুর। টেরির হিসেবে ভারতে অচিরে সেই মাপকাঠি ছোঁয়ার আশঙ্কা। বাছবিচার না করে সেচের প্রসারের পাশাপাশি শিল্প ও ঘরগেরস্থালির জলের চাহিদা এ জন্য দায়ী। কাম্বে, গন্ডোয়ানা, কৃষ্ণা-গোদাবারী ও গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে শেল গ্যাস পাওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা। কিন্তু ২০৩০-এর মধ্যে এ সব অঞ্চলে জলের তীব্র অনটন তাতে বাদ সাধতে পারে। ফ্র্যাকিংয়ের জন্য জলের পাশাপাশি প্রচুর জায়গা লাগে। জমি পাওয়ার হাজারো ঝঞ্ঝাট। জমি থেকে উৎখাত হওয়া লোকজনের পুনর্বাসনের ঝক্কি বাড়তি।
শেল গ্যাসের ব্যবহার দিনের পর দিন বাড়লেও উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বেসরকারি পুঁজি এখনও তেমন ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বলে অনুমান। অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ কোনও বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে গেলে যে ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে হয় তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে বিড়ম্বনা হিসাবে গণ্য হতে পারে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020