শক্তি নিরাপত্তার আলোচনার প্রথমেই এ দেশে শক্তির চাহিদা ও জোগানের হিসাব করা যাক। জনসংখ্যা বাড়ছে — ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ, চিনের পরেই। চিন জন্মহার কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, ভারতে তা সম্ভব হয়নি। অনতিকালের মধ্যেই তাই ভারত প্রথম স্থান নেবে। বিশেষ কয়েকটি শ্রেণির ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানও বাড়ছে। স্বাভাবিক ভাবেই শক্তির জোগান বাড়িয়ে যাওয়ার দাবিটা সঙ্গত। তবে সঙ্গত হলেও দাবিটা সহজবোধ্য নয়। জীবাশ্ম জ্বালানির অর্থাৎ তেল, গ্যাস ও কয়লার ভূগর্ভের ভাণ্ডার এ দেশে বেশ কম। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার এ দেশে খুবই কম। দু’টোই মাত্র ০.৭ শতাংশ বা ১ শতাংশের নীচে। বিপরীতে আমেরিকার ৯.৬ শতাংশ, চিনের ৫.১ শতাংশ ও মধ্যপ্রাচ্যের ৩২.২ শতাংশ। কয়লার ক্ষেত্রে এ দেশের অবস্থান ভালো, ৭ শতাংশ, বিশ্বে পঞ্চম স্থানে। বিপরীতে আমেরিকার ২৮ শতাংশ, রাশিয়ার ১৮ শতাংশ, চিনের ১৩ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার ৯ শতাংশ। কিন্তু মজুত থাকলেও খনি থেকে কয়লা যা তোলা হচ্ছে তাতে চাহিদার সঙ্গে সমতা রাখা যাচ্ছে না। আমদানি করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ, প্রধানত অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। পরিবহনের খরচ ধরলে দাম বেশ বেশি। ভাণ্ডারে যা আছে তা দিয়ে পুরো চাহিদা মেটানো যায় তবু করা হচ্ছে না কেন? কয়লাখনি অঞ্চলগুলিতে — বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ — প্রধানত আদিবাসীদের বাস। খনি করতে গেলে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে এটাই প্রধান অন্তরায়। কয়লা উত্তোলনে, বিশেষ করে গভীর খনি থেকে, যে সব যন্ত্রপাতি দরকার সেগুলি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। সেটাও খুব একটা অন্তরায় হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকারি পরিবেশ মন্ত্রকের পরিবেশ রক্ষায়, বিশেষ করে বনাঞ্চল রক্ষায়, সেগুলি আপাতত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই সব অঞ্চলে ইতিমধ্যেই খনি গড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনও সংগঠিত হয়েছে।
কয়লার রকমফেরের কথা মাথায় রেখেও জ্বালানি ব্যবহারের হিসাব করা দরকার।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019