চাহিদা ও দেশজ উৎপাদনের ফারাক মেটানোর সহজ উপায় আন্তর্জাতিক বা বাজার মূল্যে তেল সরাসরি আমদানি করা। সম্প্রতি আর একটা পন্থা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সেটা হল তেল উদ্বৃত্ত কোনও দেশের তেল কোম্পানিগুলির অংশীদার হওয়া। এতে মূলধন বিনিয়োগ বেশি কিন্তু কম দামে তেল সংগ্রহ করা যায় অর্থাৎ ব্যবস্থাটি আখেরে লাভজনক। কিন্তু সেখানেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে। প্রধান প্রতিযোগী চিন। সে দেশেও চাহিদা জোগানের তুলনায় বেশি। সুতরাং বিদেশে তেলের খনিজ মালিকানায় তারাও আগ্রহী এবং বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে পারে বেশি। ২০১০-এর শুরু থেকে ২০১১-র সেপ্টেম্বর মাস অবধি চিন বিদেশি তেলখনির মালিকানায় বিনিয়োগ করেছে ভারতের বিনিয়োগের প্রায় পাঁচ গুণ। এমন অবস্থায় ভারতের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কম-বেশি যা-ই হোক না কেন, সেই দেশেই ভারতকে তেল কিনে তেলের লাগামছাড়া চাহিদা মেটাতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার যতই ক্ষীণ হয়ে আসুক না কেন। শক্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশের দুর্বলতা কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
অনেকেই মনে করছেন এই গণতান্ত্রিক দেশে ক্রেতার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। মোটরগাড়ির সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। মোটর কোম্পানি ব্যবসা করতে নেমেছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। গাড়ির দাম বাড়ছে বা বাড়াতে হচ্ছে কিন্তু সম্পন্ন ভারতীয়রা বেশি দামের গাড়ি কিনে ইচ্ছাপূরণ করতে পারেন এবং এই শ্রেণির সংখ্যাবৃদ্ধি সামাজিক ভাবেই তো কাম্য। বেশি দামে তেলও তাঁরা কিনেই চলেছেন। এবং পোড়াচ্ছেনও। কিন্তু তার বিপরীতে দেশে গরিবের সংখ্যা কমছে না, বাড়ছে না তাদের ক্রয়ক্ষমতাও। নির্বাচনের পর নির্বাচন হচ্ছে তারা যেখানে ছিল সেখানেই থাকছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র অন্তরায় হয়ে উঠবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019