তেল, কয়লা ভাণ্ডারের প্রাথমিক আলোচনার পর চাহিদা বা ব্যবহারের দিকটায় আসা যাক। ভারতে বাণিজ্যিক শক্তির জোগানের হিসাবটা এ রকম ---
কয়লা ৫২ শতাংশ, তেল ৩২ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাস ১০ শতাংশ, জলশক্তি ৫ শতাংশ ও পরমাণু শক্তি ১ শতাংশ।
তেল যে হেতু ভারতে বাণিজ্যিক শক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জোগায়, ভাণ্ডার অত্যন্ত কম থাকা সত্ত্বেও, এ বিষয় একটু বিস্তৃত আলোচনা করা যাক।
এ দেশে তেলের ভাণ্ডার ০.৭ শতাংশ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে তেলের চাহিদা বাড়তে বাড়তে বিশ্বের মোট তেল উৎপাদনের ৩.৯ শতাংশে পৌঁছেছে অথচ দেশে তেলের উৎপাদন বেশ কিছু দিন হল একই জায়াগায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে চাহিদার তিন চতুর্থাংশ — ৭৩ শতাংশ মেটাতে হচ্ছে তেল আমদানি করে। বিশ্ব বাজারে কিছু দিন হল তেলের দাম বেশ চড়া। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে অধিকতর চাপ পড়ছে। দেশের তেলের ভাণ্ডার কম ঠিকই, কিন্তু যা আছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারলে চাপটা কমানো যেত। কিন্তু তেলের ভাণ্ডার খোঁজা, চালু তেলকূপ থেকে উৎপাদন বাড়ানো ইত্যাদি উদ্যোগগুলি সাম্প্রতিককালে অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষিত হয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রেও অবস্থাটা প্রায় একই রকম। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মেটানো যাচ্ছে না। কারণ সহজ, চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন হ্রাস। কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন থেকে তোলা গ্যাসের পরিমাণ ২০১১ থেকে ২০১২ এই এক বছরে (প্রথম চার মাসের হিসাব) এক-চতুর্থাংশ কমেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস ভারতের পশ্চিম উপকূলেই প্রধানত পাওয়া যায়। গ্যাস থেকে রাসায়নিক সার তৈরি হয় — ওই অঞ্চলে সার কারখানাও রয়েছে কিন্তু দূরে নেওয়ার জন্য যে পাইপলাইন দরকার তা ঠিকমতো তৈরি না হওয়ায় বিতরণ করার একমাত্র উপায় হল গ্যাসকে তরলীকৃত করে — লিকুফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি — দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। গ্যাসটা যে হেতু আমদানি করতে হচ্ছে না তরল গ্যাস দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তেলের প্রয়োজন মেটানো যায়। এতে তেল আমদানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমানো সম্ভব।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019