পরমাণু শক্তির প্রস্তার স্তিমিত হয়ে এলেও শক্তি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, ব্যবহার ও চাহিদার উপর তেমন প্রভাব ফেলল না — সারা বিশ্বে উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখতে তেল, গ্যাস ও কয়লা এই তিন খনিজ জ্বালানির উপরই চাপ পড়ল। মাটির নীচে এগুলির ব্যবহার সীমিত জেনেও। গত শতাব্দীর আশির দশকের পর থেকে শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক নতুন সংকোচনের আশু প্রয়োজনের আন্তজার্তিক দাবি উঠল। মূল কারণ ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’। এই উষ্ণায়ন প্রাকৃতিক কারণে কিন্তু মানব সমাজের লাগামছাড়া উন্নয়নের তাগাদায় জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যাধিক ব্যবহারকেও শনাক্ত করলেন বিজ্ঞানীরা। জ্বালানি পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে জমা হতে থাকে। পৃথিবী থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় প্রধানত এই গ্যাস — এর মাত্রা যত বাড়বে ততই উষ্ণ হবে ধরিত্রী, যদিও এটা ঘটবে একটু ধীরে। আন্তজার্তিক স্তরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্যমণ্ডলী নিয়ে যে স্থায়ী সমিতি গঠিত হয়েছে গত শতাব্দীর নয়ের দশকে, তার ধারাবাহিক সতর্কীকরণ সত্ত্বেও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ একমুখী ভাবে বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের জোরালো অভিমত, শুধু মানুষ নয়, সমস্ত জীবকূলের স্বার্থেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। বাস্তবে যা ঘটছে তা এর বিপরীত। শক্তির ব্যবহার ছেদহীন ভাবে বেড়ে চলেছে শুধু নয়, বিশ্বের বাণিজ্যিক শক্তির ব্যবহারে জীবাশ্ম জ্বালানির অংশটাও নতুন শতাব্দীর প্রায় সূচনা থেকেই একাদিক্রমে বাড়ছে। ভাবী প্রজন্মের বিপদের মাত্রা বাড়াতে বর্তমান প্রজন্মের অবদান নিঃসন্দেহে অতি নিন্দনীয়।
এ কথা সকলেরই জানা যে, মাটির নীচে বা ভূগর্ভে জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার সীমিত। যে ক্রমবর্ধমান হারে এগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে চাহিদা ও জোগানের যে ভারসাম্য এখনও আছে ভবিষ্যতে থাকবে না। সারা পৃথিবীর বাণিজ্যিক শক্তির জোগানের সিংহভাগ — ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে যার মধ্যে খনিজ তেলের অবদান সব থেকে বেশি, প্রায় এক তৃতীয়াংশ। খনিজ তেলের সব চেয়ে বড় অংশ প্রায় ৬০ শতাংশ যায় যাত্রী ও মাল পরিবহনে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/3/2020