সামরিক নিরাপত্তার কথাই গত শতাব্দীতে সব চেয়ে বেশি শোনা গেছে। দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ ঘটেছে, প্রাণহানি হয়েছে অজস্র। কাজেই নিরাপত্তা — সামরিক নিরাপত্তা যথাযথ গুরুত্ব পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে না, তা নয় তবে পরিসর অনেকটাই কমেছে, আঞ্চলিক স্তরে এসেছে। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু ইদানীং হয়ে উঠেছে শক্তিক্ষেত্র। সূচনাকাল সঠিক ভাবেই বলা যায় গত শতাব্দীর সত্তরের দশক। ১৯৭৩ সালে আরব-ইজরায়েল ‘ইয়ম-কিপুর’ যুদ্ধে কোণঠাসা আরব পক্ষ ইজরায়েল-বান্ধব পশ্চিমী দেশগুলিকে (জাপানও ছিল সেই তালিকায়) তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অতি আধুনিক পশ্চিমী দুনিয়া তেল ছাড়া অচল।
সরবরাহ বন্ধ, মজুত যা আছে (আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকায় তেল বেশি মজুত করা যায় না) তা দিয়ে বেশি দিন চালানো যাবে না, অর্থাৎ জীবন প্রায় স্তব্ধ হবে। এই ধাক্কা চলতি কথার, অয়েল শক, সারা দুনিয়ার ধনী-গরিব সহ সব দেশকেই এক রূঢ় বাস্তবের সামনে দাঁড় করায়। খনিজ তেলের সিংহভাগের মালিকানা আরব দেশগুলোর। তেল বিক্রিই তাদের আয়ের একমাত্র পথ। মাস ছয়েকের মধ্যে আরব গোষ্ঠী তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল। চালু হল সরবরাহ। কিন্তু এই ধাক্কাতেই শক্তির নিরাপত্তা আন্তজার্তিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ঘটল সামরিক প্রয়োজনে। যুদ্ধোত্তর কালে এই নতুন প্রযুক্তিগুলোর নাগরিক জীবনযাত্রায়, প্রায় সব ক্ষেত্রে —যানবাহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বাসস্থান নির্মাণ — এক ব্যাপক প্রয়োগ ঘটল। শক্তি ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ল। শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন পরমাণু শক্তি যে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হল তাতে মানবকূলে শক্তির ব্যাপক ব্যবহারও স্বল্প মূল্যে মেটানো যাবে এমনই একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ মহলে। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকেই রাশিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হল এবং পরের তিনটি দশকে বিস্তারও ঘটল উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। কিন্তু প্রযুক্তির গভীর জটিলতার কারণে মূল্যবৃদ্ধি এবং সোভিয়েত রাশিয়ার চেরোনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের বিকট দুর্ঘটনা ও তজ্জনিত বিশাল ক্ষয়ক্ষতিতে পরমাণু শক্তির প্রস্তার স্তিমিত হয়ে এল।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020