খনিজ তেলের পরেই যে শক্তি ব্যবহারের মাত্রা সব চেয়ে বেশি তা হল কয়লা। অবদান এক চতুর্থাংশের মতো। ইদানীং তেলের দাম বাড়তে থাকায় কয়লার অংশ বেড়ে চলেছে। ব্যবহার প্রধানত শক্তি উৎপাদনে, বিদ্যুৎশক্তি, ধাতু ও অন্যান্য শিল্পে। প্রাকৃতিক গ্যাসের অবদান এক পঞ্চমাংশ থেকে সামান্য বেশি। সাধারণ জ্বালানি ছাড়াও রাসায়নিক সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্যিক শক্তিতে দু’টি নবীকরণযোগ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে —জলশক্তি (বিদ্যুৎ উৎপাদনেই সিংহভাগ) এবং জৈবভর শক্তি যার অংশ মোট বাণিজ্যিক শক্তির এক দশমাংশ। পরমাণু শক্তির অংশ কমতে কমতে এখন ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অপরপক্ষে নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বেশ কম হলেও ভবিষ্যতে এই শক্তিই বিশ্বের বাণিজ্যিকশক্তির চাহিদা সম্পূর্ণ মেটাতে পারবে এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
শক্তি বিহনে জীবন অচল। সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই হবে এই আবশ্যিকতা প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই সত্য। যে সব দেশ খনিজ জ্বালানি থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিক বঞ্চিত, তাদের শক্তি আমদানি করতে হয় নিকটে বা দূরে যে সব দেশে খনিজ জ্বালানি যথেষ্ট উদ্বৃত্ত তাদের কাছ থেকে, অবশ্যই মূল্য দিয়ে। বিভিন্ন কারণে আমদানি বিঘ্নিত হলে স্বাভাবিক ভাবেই জনজীবনে সংকট দেখা দেয়। নিরাপদ জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখা যায় না। যে হেতু অপরিহার্য শক্তির অভাব ঘটলেই এই বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে তাই শক্তি সমাজকে এক বিশেষ নিরাপত্তা দেয় যা অপরিহার্য। বর্তমানে শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা প্রতিটি দেশেই শক্তি নিরাপত্তাকে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এনেছে। আমাদের দেশ ভারতেও আজ শক্তি নিরাপত্তা জাতীয় পরিচালনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে।
মনে রাখতে হবে কোনও দেশেই কিন্তু শক্তির ভান্ডার অপরিসীম নয়। বিভিন্ন দেশ তার শক্তি উৎপাদনের মাত্রা স্থির করে আগাম শক্তি ব্যবহারের মানচিত্র তৈরি করতে পারে কিন্তু তা যে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা সম্ভব হবে এমনটা বলা যায় না। সেই কারণে শক্তি উৎপাদনের মাত্রা স্থির করার সময় সম্ভাব্যতার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/21/2019