অন্য কোনও সমাধান? মনে হয় আছে। প্রযুক্তির উপর ভরসা করা যেতে পারে। তেল-কয়লা ফুরিয়ে আসছে। কার্বনভিত্তিক এই জ্বালানিগুলির দহনে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয় বায়ুমণ্ডলে, তার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তে বাড়তে বিপদসীমার দুয়ারে পৌঁছেছে। আশু প্রয়োজন নিঃসরণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা। উপায় একটাই। কার্বনহীন শক্তির উৎসের ব্যবহার বাড়ানো, সৌরশক্তির ব্যবহার উন্নত দেশগুলিতে, বিশেষত ইউরোপ, দৃষ্টান্তমূলক ভাবে বাড়ছে। প্রথম দিকে দাম বেশি হলেও প্রযুক্তির ধারাবাহিক উন্নতিতে দাম দ্রুত কমছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সৌরকোষ ও বায়ুবিদ্যুৎ যন্ত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে। সম্প্রতি জার্মানিতে এই পরিচ্ছন্ন নবীকরণযোগ্য বিদ্যুতের পরিমাণ মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৬০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অবশ্যই দিনের বেলায়। বিদ্যুৎ মজুত করার প্রযুক্তি এখনও তেমন সাফল্য পায়নি। কিন্তু প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে স্তরে পৌঁছচ্ছে তাতে এই শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে পরিচ্ছন্ন সৌরশক্তি যে বিদ্যুতের চাহিদা পুরোটা না হলেও সিংহভাগ মেটাতে পারবে তাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। যে হেতু এই শক্তি সর্বত্র লভ্য নিজ নিজ দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এই স্বনির্ভরতা যে সার্বিক নিরাপত্তা দেবে আজকের এই তেল-গ্যাস-কয়লা নির্ভর দুনিয়ায় অবিশ্বাস্য মনে হলেও আগামী দিনে এই ব্যবস্থায় সর্বজন আদ্রিত হবে। শক্তি সংগ্রহের এই দিক পরিবর্তন হবেই। কত দিনে তা নিয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু হওয়া নিয়ে বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদ মহলে কোনও দ্বিমত নেই।
শক্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তি অপচয় রোধেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শক্তি সংরক্ষণ এখনও প্রকট ভাবে অবহেলিত। এ দেশে সরকারি তরফে প্রায় তিন দশক আগে থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাফল্য এসেছে সামান্যই। কিন্তু যে ভাবে শক্তির অপচয় হয়ে আসছে তা জাতীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সামান্য সচেতন হলেই তেমন কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই শক্তি ব্যবহারে অনেক সাশ্রয় সম্ভব।
ভারতবাসী শক্তি ব্যবহারে আরও সচেতন হলেই আগামী প্রজন্ম শক্তি নিরাপত্তার অভাবে বিপদগ্রস্ত হবে না এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019