শক্তি বা জ্বালানি নিরাপত্তার ধারণাগত ভিত্তি শুধুমাত্র জ্বালানির জোগান বা সরবরাহ মাত্র নয়, তার পরিসর আরও ব্যাপক ও প্রসারিত। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানির প্রয়োজনে সাধারণত ব্যবহৃত হয় কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম উদ্ভুত শক্তি। জ্বালানির প্রয়োজনে জীবাশ্মের ব্যবহার বা বণ্টন একটি দেশের জ্বালানি সংক্রান্ত নীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। বিশেষত সেই সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে যাদের শক্তি বা জ্বালানি আমদানি করতে হয় বাইরে থেকে। তবে শক্তি নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্যগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, আর তা হল তার সহজপ্রাপ্যতা, নির্ভরশীলতা, ব্যয় সাশ্রয় যোগ্যতা এবং নিরন্তর জোগান। সহজপ্রাপ্যতা বিষয়টির মধ্যে রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানির অনুসন্ধান ও উৎপাদন এবং জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ থেকে জ্বালানির আমদানি। নির্ভরশীলতার মধ্যে এমন কিছু ব্যবস্থা যাতে জ্বালানি সরবরাহকারী দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি সত্ত্বেও জ্বালানির লভ্যতার দিকটি না বাধাপ্রাপ্ত হয় তা দেখা। ব্যয় সাশ্রয় যোগ্যতা হল আর একটি বিচার্য দিক যেখানে জ্বালানি সংগ্রহে মোটামুটি আয়ত্তের মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করা। আর নিরন্তর জোগান হল সেই বিষয়টি যেখানে শক্তি ব্যবস্থার ফলে পরিবেশের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাকে কাটিয়ে উঠে প্রকৃতির জলহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ও জ্বালানি বা শক্তির জোগানকে অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।
ভারত সরকারের গৃহীত শক্তি নিরাপত্তা হল এই যে দেশের সমস্ত নাগরিককেই জীবনধারণের প্রয়োজনে শক্তির জোগান দিতে আমরা সক্ষম। তাদের ব্যয়ক্ষমতা যাই থাক না কেন নিরাপদ এবং প্রতিযোগিতামূলক জ্বালানি সুবিধাজনক দামে সব সময়ই আমরা জোগান দিতে পারি। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, শক্তি বা জ্বালানি নিরাপত্তা — এই কথাটার মধ্যেই কিন্তু এর মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে। যদি গৃহীত শক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কিত কাঠামোর দিকে জোর দিয়ে একটি শক্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি তবেই শক্তি নিরাপত্তার মূল লক্ষ্যে আমরা পৌঁছতে পারব।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019