যে দিন থেকে মানুষ আগুন আবিষ্কার করেছে, তাকে একটা না একটা শক্তির উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। আমাদের জীবনে শক্তি ব্যবহারের পরিধি ব্যাপক — গাড়ি থেকে সেলফোন, ওষুধ থেকে প্লাস্টিক এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রক থেকে জল গরম করা, প্রয়োজনী অনেক কাজ যেমন কৃষি, কম্পিউটিং, উৎপাদন, নির্মাণ এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবা নির্ভর করে শক্তির উপর। এ ছাড়াও আধুনিক জীবনের অনেক চেনা জিনিসই থাকত না যদি তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তৈরি প্লাস্টিক, রাসায়নিক ও সার না থাকত। এর অর্থ বর্তমানে প্রতিটি অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও উন্নয়নগত বিষয়ের কেন্দ্রে রয়েছে শক্তি। বিশ্ব জুড়ে শক্তির ব্যবহার চিরাচরিত ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির (তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) উপর নির্ভরশীল। তাই এটুকু বুঝতে অসুবিধা নেই যে শুধুমাত্র যথেষ্ট জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহ ভবিষ্যতে শক্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে।
শক্তি নিরাপত্তার অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (ভবিষ্যৎ শক্তি নিরাপত্তার হিসাব করতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি সময়) শক্তি নিরাপত্তার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতা। দীর্ঘ সময় ধরে যদি শক্তি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে তা হলে তার বিশাল ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিরতা এবং তার নাগরিকের ভালোমন্দের উপর। আমাদের সমাজ সামগ্রিক ভাবে শক্তি পরিষেবার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। শুধুমাত্র ব্যক্তি বা কোনও পরিবার নয়, বাণিজ্য ক্ষেত্র, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি পরিষেবাগুলিও সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে শক্তির উপর বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল। তাই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং যে কোনও রাজনৈতিক সত্তার যোগ্যতার জন্য শক্তির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি পূর্বশর্ত। তাই সঠিক দরে শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করাই একটি দেশের পক্ষে বাধ্যতামূলক। মোটামুটি ভাবে একেই বলে শক্তি নিরাপত্তা।
শক্তি নিরাপত্তা আজ একটি উদ্বেগের বিষয়। এমনকী মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ২০১২-য় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এটা স্বীকার করে বলেছেন, এই সমস্যার চটজলদি সমাধানের কোনও বিষয় নেই। এটির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লড়াই প্রয়োজন।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019