কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় যে ভয়ানক প্রাকৃতিক দূষণ ঘটে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ তো আছেই। কিন্তু তার বাইরে বেরিয়ে আলোচনাটা যদি শুধু চাহিদা এবং জোগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়, তা হলে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, ভারত তথা বিশ্বে ভূগর্ভে কয়লার সঞ্চয় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, ভারতে কয়লা মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কয়লার চাহিদা ৪.৫ শতাংশ চক্রহারে বাড়লেও উৎপাদন বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৬ শতাংশ। তৃতীয়ত, ওই একই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে যে, ভারতে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা এবং বনমন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে কয়লার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি একটা অনড় জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আশু গতিবৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৪৪টি কয়লা উত্তোলন প্রকল্পের মধ্যে ২৪টি শুধুমাত্র ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য আটকে রয়েছে।
খুব স্বাভাবিক কারণে ভারতে কয়লার জোগান অব্যাহত রাখবার জন্য আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে একাধিক সমস্যা। প্রথমত আমদানি করা কয়লার গুণগত মানের ভিন্নতার কারণে দেশীয় কয়লার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিশিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, যথেষ্ট পরিমাণে কয়লা আমদানির জন্য এ দেশে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তৃতীয়ত, আন্তজার্তিক বাজারে কয়লার দামের সঙ্গে দেশীয় কয়লার দামের পার্থক্য এতটাই যে আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। তাই শক্তি চাহিদা মেটাতে কয়লার উপর নির্ভরতা কমাতে না পারলে আগামী দিনে আর্থিক বোঝা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোগানের সংকট অবশ্যাম্ভাবী। কয়লার এই অবস্থার পরিবর্তন আশু ভবিষ্যতে করা যাবে বল মনে হয় না। তার বড় কারণ হল ভারতে প্রচুর কয়লার সন্ধান পাওয়া গেলেও তা মাটির এতটাই গভীরে রয়েছে যে তাকে বের করতে গেলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন। সেই প্রযুক্তি আমাদের দেশে তৈরি হয় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিদেশ থেকে কয়লা উৎপাদন করা সম্ভব হলেও প্রযুক্তি আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছে। তাই সে আশা সুদূর পরাহত।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019