কয়লার পরেই ভারতে শক্তির চাহিদা মেটানোর বড় উৎস হল খনিজ তেল। যদিও বিশ্বের মোট খনিজ তেলের সঞ্চয় ভাণ্ডারের মাত্র ০.৫ শতাংশ রয়েছে ভারতে। আর তার চাইতেও ভয়ের কারণ হল, ভারতে বর্তমান দৈনিক গড় উৎপাদন ৮৫৮ হাজার ব্যারেল বজায় থাকলে আগামী ১৮ বছরের মধ্যে ভারতের সঞ্চিত খনিজ তেলের ব্যবহার নিঃশেষ হয়ে যাবে, যদি না ইতিমধ্যে নতুন নতুন তৈলক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। দেশে বর্তমান দৈনিক খনিজ তেলের চাহিদা ৩৪,৭৩,০০০ ব্যারেল, যা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চার গুণেরও বেশি। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে খনিজ তেলের চাহিদা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ব্যবধান বিস্তৃততর হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ গড় জাতীয় অর্থনীতি বিকাশের হার ৯ শতাংশ বজায় রাখতে হলে শক্তি উৎপাদনের হার ৬.৫ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন। এই প্রয়োজন মেটাতে এখনই ৭৫ শতাংশ খনিজ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনার্জি সেক্টর ফর টুয়েলফথ প্ল্যান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ভারতে খনিজ তেলের চাহিদা হবে ২০৪.৮০ এমটিওই। আর এই পরিমাণ তেলের চাহিদা মেটাতে প্রায় ৮০ শতাংশ খনিজ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, আন্তজার্তিক বাজারে তেলের দাম সতত ওঠানামা করলেও দেশীয় বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার একটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। ফলে ভর্তুকির বিপুল বোঝা বহন করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতিই নুব্জ হয়ে পড়ার উপক্রম। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ তেল আমদানি করতে গিয়ে অন্যান্য অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রসর তেল আমদানিকারক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা তো আছেই। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য (ইরান, ইরাক-সহ) এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের তেল আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করছে। ফলে শক্তি নিরাপত্তার কারণেই ভারতের মতো খনিজ তেলের ব্যাপারে পরমুখাপেক্ষী দেশ যত দ্রুত শক্তি জোগানের জন্য খনিজ তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে পারবে, ততই মঙ্গল।
ভারতে প্রাথমিক শক্তি চাহিদার দশ শতাংশ পূরণ হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। কিন্তু বিশ্বের গড় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি সরবরাহের হার ২৩.৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে। ভারতের তৈল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মোট শক্তি চাহিদার ২০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে পূরণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমদানি বৃদ্ধিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যেখানে ছিল ২৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার ডিম্যান্ড (এমএমএসসিএমডি) সেখানে জোগান ছিল ১৮০ এমএমএসসিএমডি। এক দিকে জনবিস্ফোরণের চাপ এবং অপর দিকে অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে চাহিদা জোগানের এই ব্যবধান যে আগামী দিনগুলিতে বিস্তৃততর হবে এ কথা সহজেই অনুমেয়।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020