সব চেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হল, যে সব শক্তি উৎসের উপর ভিত্তি করে এত সব পরিকল্পনা, তার প্রত্যকেটির সরবরাহ আগামী দিনে ভীষণ ভাবেই অনিশ্চিত। উপরন্তু প্রচলিত শক্তির উৎসগুলির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির উপর এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে চলেছে যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন, সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি এবং বায়ুমণ্ডলের দূষণের ফলে সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই চিরাচরিত শক্তির উৎসগুলির উপর নির্ভরতা ধাপে ধাপে কমিয়ে বিকল্প পথের সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি। এবং তার জন্য প্রয়োজন অচিরাচরিত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস সন্ধান।
মূলত দু’টি অচিরাচরিত গ্যাসের উত্তোলন ও ব্যবহারের উপর বর্তমানে সবিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এই দু’টি হল ‘শেল গ্যাস’ এবং ‘কোল বেড মিথেন’। শেল গ্যাসের ব্যবহার ও উত্তোলনের ব্যাপারে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যে ভারত যথেষ্ট উজ্জীবিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত দশকে যেখানে শেল গ্যাসের ব্যবহার ছিল মাত্র ২ শতাংশ সেখানে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। ভারতে বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ২৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট শেল গ্যাসের ভাণ্ডার রয়েছে। এই শেল গ্যাস বাণিজ্যিক ভাবে উত্তোলনের জন্য এবং ‘আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন’ নিলাম ডাকার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
ভারতে মোট ১২টি রাজ্যের ৩৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৪.৬ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার কোল বেড মিথেন ভাণ্ডার রয়েছে। মূলত মধ্য ও পূর্ব ভারতে কয়লা ও লিগনাইট সমৃদ্ধ এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই কোল বেড মিথেন উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে রাণিগঞ্জ-পূর্ব, রানিগঞ্জ দক্ষিণ, ঝরিয়া, সোহাগপুর পশ্চিম এবং সোহাগপুর পূর্ব — এই পাঁচটি এলাকায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে কোল বেড মিথেনের দৈনিক উৎপাদন ০.১৫ এমএমএসসিএমডি, যা ভবিষ্যতে বাড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতে ১৯৪৮ সালে অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন এবং ১৯৫৪ সালে ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমিক এনার্জি গঠনের মাধ্যমে এ দেশে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের আগ্রহ এবং দায়বদ্ধতা অনুমান করা যায়। ভারতে এই শক্তির সম্ভাবনাও যথেষ্ট। কারণ প্রচুর পরিমাণ থোরিয়াম এবং যথেষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়াম ভাণ্ডার তো এ দেশে রয়েছেই, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলির উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি হিসেবে পরমাণু চুল্লিতে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও ভারত অর্জন করেছে। কিন্তু জাপানের ফুকুশিমা-দাইচি দুর্ঘটনার পর থেকেই চিত্র পালটাতে শুরু করেছে। এক দিকে যেমন পরমাণু চুল্লির নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে, অন্য দিকে শক্তি উৎপাদনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান চাপানউতোর। আর এই জটিলতার জন্য রাজনৈতিক টানাপোড়েনই সম্পূর্ণত দায়ী। তাই পুরো প্রক্রিয়া এবং উদ্যোগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় জট কাটার আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020