ভারত শুধুমাত্র, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই নয়, গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) এবং শক্তি ক্রয়তুল্য (পাওয়ার পারচেজ প্যারিটি)-র নিরিখে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের পরেই ভারতের স্থান। আর শক্তি ব্যবহারের মাপকাঠিতে ভারতের স্থান চতুর্থ। চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের পরেই ভারত। বিশ্বে মোট ব্যবহৃত শক্তির ৪.৬ শতাংশ ভারতে খরচ হয়। ২০০৯ সালে ভারতে মোট ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ ছিল ৪৮৭.৬ এমটিওই (মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট)। পরিকল্পনা কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই ব্যবহার বেড়ে হবে ৭৩৮.০৪৭ এমটিওই, আর এই বিপুল পরিমাণ শক্তির ৩৮ শতাংশ জোগাতে হবে বিদেশ থেকে আমদানি করে।
চাহিদা এবং জোগানের এই ব্যবধান কিন্তু ক্রমবর্ধমান। বিদ্যুতের কথাই যদি বিবেচনা করা হয়, তা হলে দেখা যাবে শুধুমাত্র একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ভারতে মোট পঞ্চান্ন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়ে গিয়েছে ৮.৭ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এই ঘাটতির পরিমাণ ৯ শতাংশ। ইন্টারন্যাশানাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)-এর ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক (ডাবলুইও)-২০১২ অনুযায়ী ২০৩৫ সালে সারা বিশ্বে শক্তির চাহিদা বর্তমান চাহিদার এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পাবে। আর এই বৃদ্ধির ৬০ শতাংশ অবদান থাকবে শুধু চিন, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদার।
ভারতের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে শক্তির চাহিদা। এ ছাড়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক ষষ্ঠাংশ ভারতের অধিবাসী। তাই এই বিপুল সংখ্যক মানুষের শুধুমাত্র দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেই প্রতি দিন খরচ হয় বেশ বড় অঙ্কের শক্তি। ২০০৯ সালে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি শক্তিগ্রাহক দেশের শক্তি ব্যবহারের চিত্রটি সারণি - ১ থেকে স্পষ্ট হবে।
রাষ্ট্র |
প্রাথমিক শক্তি উপভোগের (ব্যবহার) পরিমাণ, এমটিওই এককে |
চিন |
২২১০.৩ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
২২০৫.৯ |
রাশিয়া |
৬৪৪.৪ |
ভারত |
৪৮৭.৬ |
জাপান |
৪৭৪.০ |
সূত্র : বিপি স্ট্যাটিস্টিকাল রিভিউ ২০১২
ওই একই বছরে বিভিন্ন প্রধান শক্তিগ্রাহক দেশের মাথাপিছু শক্তিগ্রহণ (উপভোগ)-এর চিত্রটি সারণি - ২ থেকে এক বার দেখে নিন।
রাষ্ট্র |
মাথাপিছু শক্তির ব্যবহার (কিলোগ্রাম অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট এককে) |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
৭০৩৪ |
রাশিয়া |
৪৫৫৯ |
জাপান |
৩৭০৭ |
ইউকে |
৩১৮৪ |
চীন |
১৬৯৮ |
ব্রাজিল |
১২৪০ |
ভারত |
৫৮৫ |
বিশ্বের গড় |
১৭৯৭ |
সূত্র : আইইএ কি ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্স ২০১১
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে অন্যান্য শক্তিগ্রহণে অগ্রগণ্য দেশের নাগরিকের মাথাপিছু শক্তিগ্রহণের তুলনায় ভারতীয়দের মাথাপিছু শক্তি খরচের হার যথেষ্ট কম। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টির কোনও কারণ নেই। তার প্রধান কারণ ভারতের জনসংখ্যা ও তার বৃদ্ধির হার এবং দ্বিতীয় কারণ, ভারতে অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথাপিছু শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতা।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/9/2020