বিজ্ঞানীরা এখন শক্তি দক্ষতা অর্থাৎ এনার্জি এফিসিয়েন্সির কথা প্রায়শই বলে থাকেন। সারা বিশ্বেই শক্তিচালিত আধুনিক যন্ত্র প্রস্তুতিতে এই এনার্জি এফিশিয়েন্সির উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তা সে গাড়ির মাইলেজ বাড়ানো হোক বা তারকাচিহ্নিত রেফ্রিজারেটর এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রই হোক। আমরা যদি এ বার আমাদের দেশের শক্তিচিত্রের দিকে তাকাই তা হলে দেখা যাবে যে, আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তির নব্বই ভাগ আসছে চিরাচরিত শক্তির উৎসগুলির থেকে আসছে চিরাচরিত শক্তির উৎসগুলির থেকে। কিন্তু সমস্যা হল ভারতের মতো একশো কুড়ি কোটি মানুষের দেশে যে বিপুল শক্তির চাহিদা, সেটা মেটাতে (অবশ্যই ভর্তুকি সহ) খরচ হয়ে যাচ্ছে রাজস্বের একটা বড় অংশ। তদুপরি, যে হেতু সারা বিশ্বেই জীবাশ্ম জ্বালানি শেষ হয়ে আসছে, তাই কয়লা থেকে খনিজ তেল কিংবা প্রাকৃতিক গ্যাস -- সবেরই দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ভারতের মতো দেশে তাই সমস্যাটা ব্যপকতর হচ্ছে ক্রমশ। কারণ ভারতে ব্যবহার্য খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস — দু’টোর সরবরাহই আমদানি-নির্ভর। এমনকী কয়লারও। তাই শক্তি সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির হাল ফেরানোর থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন শক্তির জোগানকে সম্ভব করাটাই এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু আইন প্রণয়ন করে কিংবা নীতি রচনা করে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই সরকারি স্তরে প্রকৃত সদিচ্ছা এবং ব্যাপক জনসচেতনতা। এর জন্য সুসংহত শক্তি নীতি তৈরি করা প্রয়োজন। যে নীতির সাহায্যে আমরা বিকল্প শক্তির উৎসকে কী ভাবে ব্যবহার করব তা বোঝা যাবে। শুধু তা-ই নয়, এই ধরনের শক্তিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সরকারি ক্ষেত্রের পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রের কী অবদান সেটিও বোঝা যাবে। জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের ধারাকে অনুসরণ করে এ ধরনের শক্তি নীতি গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020