পুরাণে ভস্মাসুরের গল্পটা মনে পড়ে? সেই যে শিব ঠাকুর বর দিয়েছিলেন ভস্মাসুরকে, সে যার মাথায় হাত রাখবে সেই ভস্ম হয়ে যাবে। আর বর পেয়ে সে শিবের মাথাতেই হাত রেখে বরের শক্তি পরখ করতে চেয়েছিল। সে যাত্রায় অবশ্য মহাদেবকে রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং বিষ্ণু। মোহিনী রূপে ভুলিয়ে ভস্মাসুরকে নিজের মাথায় হাত রাখতে বাধ্য করেছিলেন।
আপনারা ভাবছেন ধান ভানতে এ আবার কী শিবের গীত! আসলে আমরাও প্রগতির নামে আসল সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মোহিনী মায়ায় নির্বিচারে অকৃপণ ভাবে খরচ করে চলেছি পৃথিবীর বুকে সঞ্চিত শক্তিভাণ্ডার। এতে শক্তিভাণ্ডার তো নিঃশেষ হতে চলেছে বটেই, এর সঙ্গে প্রকৃতির উপর এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে যে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। বিশ্বে সঞ্চিত শক্তিভাণ্ডার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা বলছেন চিরাচরিত শক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এখনই বিকল্প শক্তির সন্ধান না করলে অচিরেই সভ্যতার গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে। কারণ বর্তমান বিশ্বে যে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে আমাদের প্রগতির রথচক্র সচল, সেটাই তো তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং তজ্জনিত দূষণের ফলে আমাদের এই গ্রহটি এগিয়ে চলেছে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে।
শক্তি সংক্রান্ত সংকট যে হেতু কোনও রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বের সংকট, তাই শক্তি সংরক্ষণের চিন্তাটি আজ বিশ্বে সব চেয়ে আলোচিত বিষয়। উদ্বেগেরও বটে। শক্তি সংরক্ষণ বলতে সারা বিশ্বে চিরাচরিত শক্তির উৎস অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি ও হাইড্রোকার্বন সংরক্ষণের কথা ভাবা হচ্ছে। দু’ভাবে এই শক্তি সংরক্ষণ সম্ভব বলে মনে করছেন শক্তিবিজ্ঞানীরা। প্রথমত, চিরাচরিত শক্তির উৎস, মূলত কয়লা, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর যথাসম্ভব নির্ভরতা কমিয়ে অপ্রচলিত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যক্ষ ভাবে প্রচলিত শক্তি ন্যূনতম ব্যবহার করে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলতে হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020