যে কোনও কাজ করতে গেলেই শক্তি দরকার হয়, সেটা রান্নার কাজ, সেচের কাজ বা যানবাহন চালানোর কাজ বা ঘরে আলো জ্বালানোর কাজ বা শিল্প চালানোর কাজ — যে কোনও বিষয়ই হতে পারে। যুগ যুগ ধরে মানুষ বিভিন্ন শক্তির উৎস থেকে এই চাহিদা মিটিয়ে চলেছে।
শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কয়েকটি পর্যায়ে উত্তরণ হয়েছে। প্রতিটি উত্তরণ হয়েছে শক্তির উৎসগুলির উৎকর্ষ ও অন্যান্য সুবিধার বিচারে। বহু কাল আগে পৃথিবীর লোকেরা তেল, কয়লা, পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার জানত না। যদিও অপ্রত্যক্ষ ভাবে তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করত। কিন্তু ব্যবহারের পদ্ধতিগুলি ছিল খুবই নিম্ন মানের।
এক কালে পৃথিবীর লোকেরা জ্বালানি কাঠের শক্তি, মানুষের পেশীশক্তি আর জীবজন্তুর শক্তি ব্যবহার করত। এখনও এশিয়া, আফ্রিকার বহু দেশের মানুষ এই শক্তিই ব্যবহার করে দিনযাপন করেন। এই সব মানুষ অত্যন্ত গরিব এবং সভ্যতার আলো এখনও এদের কাছে পৌঁছয়নি। এদের চলে কী ভাবে? কী এদের শক্তির উৎস? এরা কাঠ দিয়ে রান্না করে ও ঘর গরম রাখে। গরু দিয়ে চাষবাস করে। উট বা ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে। হাতপাখা দিয়ে গরমে হাওয়া খায়। বালতি দিয়ে কুয়ো থেকে জল তোলে ও রেড়ির তেল দিয়ে আলো জ্বালায়। আগেকার দিনে আমরা এই শক্তির উৎসগুলি নিয়েই চলতাম। আদিবাসী অঞ্চলে এখনও লোকেরা কাঠের মশাল জ্বালিয়ে রাতের বেলা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফেরে। কাঠের ভিতর যে শক্তি থাকে সেটা আসলে সৌরশক্তিরই একটি রূপ। উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষের মাধ্যমে সেই শক্তি সঞ্চয় করে। জ্বালানি কাঠ ছাড়াও যে শক্তির ব্যবহার সে সময় হত, তা হল মানুষের পেশী শক্তি এবং গৃহপালিত পশুর শক্তি। উদাহরণ — কুয়ো থেকে জল উত্তোলন, পাখা টানার কাজ, চাষের কাজ, ঘোড়ার গাড়ি উটের গাড়ি বা মাঝির নৌকা চালানো, পায়রার মুখে চিঠি পাঠানো, ঘানির তেল অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে যত শক্তির প্রয়োজন তার সবই আসত মানুষের পেশীশক্তি ও গৃহপালিত পশুর শক্তি থেকে। আজ একবিংশ শতাব্দীতেও কিন্তু এই সব শক্তির উৎস ব্যবহার হয়ে চলেছে। সারা বিশ্বের ৭০০ কোটি লোকের মধ্যে প্রায় ১৬০ কোটি লোক এখনও শক্তির এই সব উৎসগুলি ব্যবহার করে। এই শক্তির উৎসগুলি ব্যাবহারের কিছু ভাল দিক আছে ও কিছু সমস্যাও আছে। ভাল দিকটা হল এই সব শক্তির উৎস (জ্বালানি কাঠ বাদে) ব্যবহার করলে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয় না। আগেই বলেছি সমস্যা হল এই যে এই সব শক্তিউৎসের কর্মক্ষমতা খুবই নিম্ন মানের বিশেষত যন্ত্রের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারের ক্ষেত্রে। উদাহরণ — একটি লোক সারা দিন চেষ্টা করে নদী থেকে মাত্র ১২০ মাত্র বালতি জল তুলে সেচের কাজ করতে পারে। অর্থাৎ অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন লোক দিনে মাত্র ১২০০ লিটার জল তুলে সেচের কাজ করতে পারে। একটি লোকের সারা দিনের শ্রমের মূল্য হয়তো ৩০০টাকা। সেখানে একটি ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক পাম্প এক ঘণ্টা মাত্র চালালে সমপরিমাণ জল তুলতে পারে। আর এই পাম্প এক ঘণ্টা চালালে মাত্র পাঁচ টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয়। যন্ত্রের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে বিপ্লব ঘটে গেল। তাকেই বলে শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের ফলে মানুষের কাজ করার ধরনটাই পাল্টে গেল। শিল্প বিপ্লবের শুরু ১৭৭৫ সালে। দেশের নাম গ্রেট ব্রিটেন, পরে সেই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সে ১৮৫০ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শিল্প বিপ্লবের জোয়ার আসে। হস্তশিল্পের স্থানে বড় বড় যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। যন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি হওয়ায় হস্তশিল্পীরা যন্ত্রের ব্যবহার করা শুরু করলেন। পেশীশক্তির ব্যবহারের পরিমাণ কমল। যে ট্রেন ঘোড়ায় টানত, সেই ট্রেন চলা শুরু করল কয়লার ইঞ্জিনে। আমরা কয়লার জগতে প্রবেশ করলাম। ১৮২৫ সালে প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন চালু করলেন জর্জ স্টিফেনসন। উত্তর ইংল্যান্ডে প্রথম কয়লার ইঞ্জিনচালিত যাত্রী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ঘোড়ায় টানা ট্রেনের ব্যবহার কমতে শুরু করল। তখন ট্রেনের বগিগুলি ছিল খোলা। কারখানাকে কেন্দ্র করে শুরু হল নগরায়ন। পরিবেশ দূষণও বাড়তে শুরু করল কিন্তু আমরা অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করলাম। আর সেই অর্থনীতি হল কয়লা ভিত্তিক।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020
শক্তি বাঁচাতে যথাযথ যন্ত্র বাছাই কী ভাবে করবেন, তা...
আমরা বাড়িতে নানা ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার কর...