‘শক্তির নিরাপত্তা’ এই শব্দ দু’টি আমরা প্রায়ই শুনি, বিশেষ করে যখনই মাটির তলায় জ্বালানি তেল বা কয়লার মজুতের পরিমাণ নিয়ে কথা হয় — বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ পড়ে যখন এই ভাণ্ডার কবে নিঃশেষিত হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ এক রকমের সভ্যতার সঙ্কট বই-কি। এক কথায় পৃথিবীর গর্ভে সঞ্চিত আছে যে খনিজ জ্বালানি (গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি) ভূপৃষ্ঠে আনার পর শতকরা ১০০ ভাগ দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য তা ব্যবহার করতে পারাই শক্তি নিরাপত্তার মূল উদ্দেশ্য। একটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রাকৃতিক সম্পদ এক দিন না এক দিন ফুরিয়ে যাবেই। তাই নতুন নতুন জায়গায় এর খোঁজ চালাতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে আমাদের এখনই সজাগ হতে হবে। নয়তো বড় দেরি হয়ে যাবে। প্রতিটি দেশের শিল্প বাণিজ্যিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তার অর্থনৈতিক চাহিদা নিরূপিত হয়। আমাদের দেশ খনিজ জ্বালানির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। যে কোনও রাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শক্তি নিরাপত্তার এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যদিও অচিরাচরিত শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে খরচ অনেক কমে গিয়েছে এবং দেশে এই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যাও বেড়েছে তবু অন্তত ৫০ বছর আমাদের খনিজ জ্বালানির উপরই নির্ভরশীল থাকতে হবে। আজ হয়তো আমাদের আপশোশ হচ্ছে এই ভেবে যে, গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় আমরা না জেনে কত ভালো মানের কয়লা স্টিম ইঞ্জিন চালিয়ে খরচ করেছি। আজ আমরা সেই মানের কয়লা কোথায় পাব? ভবিষ্যতে যে কয়লা উঠবে তার মান হয়তো আরও খারাপ হবে। আমাদের উচিত প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্লান্ট লোড ফ্যাক্টর (পিএলএফ) আরও উন্নত করার জন্য সচেষ্ট হওয়া। তার জন্য ব্যবহৃত কয়লার প্রতিটি গুঁড়ো জ্বালাতে হবে, ব্যবহৃত জলের একটি ফৌঁটাও নষ্ট করা চলবে না। এবং জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/13/2019