একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নিরূপণ করা যায় সেই দেশের শক্তির চাহিদা দেখেই। আর্থিক সামাজিক উন্নতি যত হবে পাল্লা দিয়ে ততই শক্তির চাহিদা বাড়বে। তখনই শক্তির নিরাপত্তার প্রশ্নটি আসে। অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মজুত থাকছে তো? ভারতবর্ষের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এই প্রশ্নটি এখন সব চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী বিশ্বে ভারত একটি সুপার পাওয়ার হয়ে উঠবে। সেই নিরিখে তার শক্তির চাহিদা বহু গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে আমাদের দেশের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। এই হার বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে। এই কারণে ভারতের মতো একটি দেশের এনার্জি সিকিউরিটির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মনে এই মুহূর্তে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হল ভারতের মতো একটি দেশে যেখানে আর্থিক পরিকাঠামোর পরিধি ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে শক্তির উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি সামলানো যাবে তো? আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব হয়ে যাবে না তো? যাকে আমরা প্রকৃত অর্থেই সংকট বলি?
ভারতবর্ষ যে সুসংহত শক্তিনীতি নিয়েছে তা মূলত দু’টি প্রধান বিষয়ের উপর আধারিত। ২০৩০ পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে যে বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে তা আমরা মেটাতে পারব কি? ওই সময়ে আর্থিক উন্নতির হার যখন ৮-৯ শতাংশে দাঁড়াবে, তখন আমাদের দেশের প্রত্যেকটি স্তরের শক্তির চাহিদা মেটাতে পারব কি? শুধু শিল্পে নয়, সামাজিক পরিষেবা নয়, স্বাস্থ্য বা উৎপাদন নয় —সব ক’টি ক্ষেত্রে শক্তির অতিরিক্ত চাহিদা দেখা যাবে। এমনকী ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের আর্থিক উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের ব্যবহারের তুল্যমূল্যে শক্তির চাহিদা বাড়বে। শক্তির চাহিদা বাড়বে এই ভাবে গৃহস্থালিতেও। এই চাহিদা তা হলে আগামী দিনে মিটবে কী করে। এই ভাবেই এসে যাচ্ছে শক্তি নিরাপত্তার প্রশ্ন। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে শক্তির চাহিদার বিষয়টি এ রকম — মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ প্রায় পশ্চিমী আদলে জীবনযাপন করেন, ৪০ শতাংশ মানুষ এই জীবনের দিকে চলেছেন, বাকি ৫০ শতাংশ মানুষের চাহিদা বাণিজ্যিক শক্তি যার মধ্যে দিয়ে তাঁরা শিল্প ও কৃষি উৎপাদন এবং জীবনযাত্রার মানও বাড়াতে চান। সুতরাং অন্য অর্থে শক্তি নিরাপত্তা হল শক্তি-খরচ বা এনার্জি কনসাম্পশন সুনিশ্চিত করা। এই কথা মাথায় রেখেই ভারতবর্ষকে শক্তি নিরাপত্তা নীতি কার্যকর করতে হবে।
সূত্র : যোজনা মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/27/2019