নেপালের প্রত্যন্তের ছোট্ট গ্রাম বাদ্রেনি। বনের কাঠ পুড়িয়েই তাদের জীবন চলে। সেখানকার মানুষজন সম্প্রতি পরিচিত হয়েছেন জৈব গ্যাসের সঙ্গে। কিন্তু এই জৈব গ্যাস প্রকল্প কি পারবে তাদের প্রয়োজন আর অভ্যাসকে বদলাতে!
সাবিত্রী দেইরি থাকেন দক্ষিণ নেপালের ছোট্ট গ্রাম বাদ্রেনি'র একটি কুঁড়েঘরে। চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কের খুব কাছেই তাঁর বাড়ি। অন্যান্য কৃষক আর গ্রামের মানুষজনের মতোই রান্নার জ্বালানি হিসাবে সাবিত্রী ব্যবহার করেন কাঠ। কিছু জ্বালানি কাঠ আমাদের কিনতেও হয়। আর কিছু কাঠ বন থেকে আনি,'- তিনি বলে চলেন, ‘এক বার বনে কাঠের জন্য গেলে কাঠ নিয়ে ফিরে আসা প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মামলা।' দেইরি জানেন, জ্বালানির জন্য এ ভাবে বন থেকে কাঠ কাটা পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু যখন বেঁচে থাকার প্রশ্ন আসে, যখন খাবার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির দরকার হয়, তখন পরিবেশ রক্ষার চাইতে রান্নাই মুখ্য হয়ে ওঠে।
মানুষের এই প্রয়োজন আর পরিবেশের মধ্যকার এই বিরোধ এড়াতে বাদ্রেনিতে পরীক্ষমূলক ভাবে একটি বায়োগ্যাস প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। যা বাদ্রেনিবাসীদের জ্বালানির সংকট মেটাবে পাশাপাশি বনকেও রক্ষা করবে। কিন্তু দেখা গেছে, বিবিধ অপচয়ের কারণে এই প্রকল্পটি সমালোচিতই হয়েছে। যেমন এই বায়োগ্যাস প্রকল্পের কল্যাণে কতখানি কার্বন কম পুড়ল তা পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপ থেকে যদি কেউ আসেন তখন শুধু পর্যবেক্ষণেই সব মিলিয়ে খরচা দাঁড়ায় চোদ্দো হাজার ইউরোতে!
ঠিক চার বছর আগে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার বা ডব্লিউডব্লিউএফ এবং নেপালের সরকার এই গ্রামের বায়োগ্যাস প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছিল। গ্রামবাসীরা তাঁদের গৃহপালিত পশুর মল এই বায়োগ্যাসের ভূগর্ভস্থ আধারটিতে জমা দিয়ে আসতেন। প্রাকৃতিক ভাবেই সেখানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হত আর তা থেকে পাইপে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেত জ্বালানির প্রয়োজনীয় বায়োগ্যাস। ‘এই গ্যাসে কোনও রকম বাজে গন্ধ নেই'- সেনি চৌধারি নামের আরেক জন বাদ্রেনিবাসী কৃষাণীর মন্তব্য। রান্নার জন্য দূরের বন থেকে কষ্ট করে কাঠ কেটে আনার ঝামেলা নেই, বিরক্তিকর ধোঁয়ার অস্বস্তি নেই, কোনও রকম ঝামেলা ছাড়াই চমৎকার ঘরে বসে রান্না করা যায়।
সূত্র : হুমায়ুন রেজা, ডিডাবলু ওয়েবসাইট
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020