পরস্পরের উপরে নির্ভরতা আর নয়। এ বার স্বাধীনতা দিয়েই সংস্কার। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারে ফের হাত পড়ছে এ ভাবেই। আট বছর পরে। ২০০৭ সালে বাম জমানায় সরকারি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পেশাদারি আনতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে ‘বণ্টন’ ও ‘সংবহন’ নামে দু’টি আলাদা সংস্থা গড়া হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পায়নি সেই দু’টি সংস্থা। পারস্পরিক নির্ভরতা জিইয়ে রেখেই তাদের কাজ চালাতে হচ্ছিল। এবং বিভাজনের সেই সরকারি সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, অচিরেই তা টের পেয়েছিলেন বঙ্গবাসী। পর্ষদ এলাকা মানেই লোডশেডিং এই দুর্নাম ঘুচিয়ে গ্রীষ্মকালেও চাহিদা মিটিয়ে ‘বিদ্যুৎ-উদ্বৃত্ত’ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয় পশ্চিমবঙ্গ।
এত দিনে বণ্টন ও সংবহন সংস্থার পারস্পরিক নির্ভরতা কমাতে আরও এক দফা সংস্কারের কাজে হাত দিচ্ছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে সংবহন সংস্থা স্বাধীন ভাবে কাজ করবে। বণ্টন সংস্থার কোনও কাজ বা সিদ্ধান্তের উপরে তারা নির্ভর করবে না।
|
|
প্রথম দফার সংস্কারের প্রায় আট বছর পরে এই উদ্যোগ কেন?
“আমরা চাই, দু’টি সংস্থা পৃথক ভাবে কাজ করুক। আরও ভাল কাজ করুক,” বলছেন রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব গোপালকৃষ্ণ। অর্থাৎ পরস্পরের উপরে নির্ভরশীলতা ছেড়ে সংস্থা দু’টি স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ পেলে আরও ভাল ভাবে কাজ করবে বলে সরকারের বিশ্বাস। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।
বিভাজন পর্বেই অবশ্য পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি সংস্থার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কথা ভাবা হয়েছিল। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানান, এক সময় গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া, মিটার দেখা, হাইটেনশন লাইন টানা, সাবস্টেশন তৈরি অর্থাৎ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সবই করতে হত পর্ষদকর্মীদের। সেই কাজে পেশাদারির যথেষ্ট অভাব ছিল। ফলে পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠত। এই অবস্থায় পেশাদারিত্ব আনতে ২০০৩ সালে সংসদে বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করে বলা হয়, প্রতিটি রাজ্যকেই বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে ফেলে বণ্টন ও সংবহন ব্যবসাকে আলাদা করতে হবে। পর্ষদ বলে কিছু রাখা যাবে না। তৈরি করতে হবে পৃথক ‘কোম্পানি’। তার চার বছর পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রন্ট সরকার। সেই সংস্কারের পরিকল্পনা তৈরি করেছিল একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা।
সূত্র : পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019