গাছের পাতায় তৈরি হবে জ্বালানি। প্রযুক্তি ও জীববিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে এমনই পাতা তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। পাতাটি সৌরশক্তি থেকে তরল জ্বালানি উৎপাদন করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েস ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যালি ইন্সপায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একদল গবেষক এমন জৈবপ্রযুক্তির (বায়োনিক) পাতা তৈরি করেছেন, যা তরল জ্বালানি দেবে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষক ড্যানিয়েল নোচেরা। তাঁদের গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস অব দি ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’।
গবেষকরা বলেন, জৈবপ্রযুক্তির পাতায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি হয়। পরে পাতাটির মধ্যে থাকা ‘রালসটনিয়া ইথ্রোফা’ নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া হাইড্রোজেন গ্যাস শুষে নিয়ে একে প্রোটন ও ইলেকট্রনে রূপান্তর করে। পরে ওই ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমন্বয় ঘটে তৈরি হয় তরল জ্বালানি। এই জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়ায় বড় কোনও পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয় না।
ওয়েস ইনস্টিটিউটের গবেষক পামেলা সিলভার বলেন, তাঁদের তৈরি প্রযুক্তি এটিই প্রমাণ করে যে সূর্যের আলো থেকে পাওয়া শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে তরল জ্বালানিতে সংরক্ষণ করা সম্ভব। সূর্যের আলোর শক্তি কার্যকর পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবনই ছিল তাঁদের গবেষণার লক্ষ্য। ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারে এই সাফল্য মিলেছে।
সৌরশক্তি থেকে তরল জ্বালানি তৈরির সম্ভাব্যতার খবরটি এমন সময়ে এল, যখন বিশ্ববাসী জ্বালানির নতুন উৎসের পেছনে ছুটছে। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌরশক্তি ব্যবহার অতটা জনপ্রিয় হতে পারেনি। যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবকেই অনেকে এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন। একই কারণে সৌরশক্তিচালিত গাড়ির চেয়ে সংরক্ষিত বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গবেষকরা আশা করেন, জৈবপ্রযুক্তির পাতা ও প্রচলিত সৌরকোষ ভবিষ্যতে শক্তির অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে। গবেষকরা বলেন, ভবিষ্যতে জৈবপ্রযুক্তির কোষ ও সৌরকোষের মধ্যে পার্থক্য হবে গত শতাব্দীর থমাস এডিসন ও নিকোলা টেসলার মধ্যকার এসি ও ডিসি বিদ্যুতের দ্বন্দ্বের মতোই। এসি বা চলবিদ্যুতের মতোই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। আর ডিসি বা সংরক্ষিত বিদ্যুতের মতো জৈবপ্রযুক্তির পাতায় উৎপন্ন তরল জ্বালানিতে চলবে যানবাহন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিলভার ও নোচেরা বলেন, বড় কোনও পরিকাঠামো প্রয়োজন না থাকায় জৈবপ্রযুক্তির পাতা প্রত্যন্ত অঞ্চলের জ্বালানির একটি ভালো উৎস হতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রযুক্তি ভোক্তাপর্যায়ে যেতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাই প্রযুক্তিটি বাজারে আসতে কিছু সময় লাগবে।
সূত্র : এন টিভি, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/9/2020