অন্য আর পাঁচটা উৎসের মতো শক্তিরও লিঙ্গভিত্তিক বিশেষত্ব রয়েছে। শক্তির লভ্যতা, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ভিন্নতা প্রতীয়মান। মহিলাদের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্বার্থ কাজ করে, পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের। শক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে সামাজিক বোধের উন্মেষ হওয়ার প্রয়োজন আছে। যেমন বিদ্যুৎ বিহীনতা, অন্ধকারে রান্না করা, চিরাচরিত জ্বালানি ব্যবহারের দরুন ঘরের ভিতরের বায়ু দূষণ – এই সব ক্ষেত্রে লভ্যতা, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারের লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এত দিন পর্যন্ত শক্তি সম্পর্কিত নীতিতে এই লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
গ্রামের দিকে পরিষ্কার শক্তির উৎসের অলভ্যতা নারী ও শিশুর উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ঘরের ভিতর আগুন জ্বালানোয় যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় তার দূষণে প্রতি বছর ১৬ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর ২৫ শতাংশই ভারতে এবং এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। মহিলারা কাঠ, ঘুঁটে, কেরোসিন ব্যবহার করে রান্না করেন, এর থেকে নির্গত দূষণের শিকার হন তাঁরাই। বাড়িতে আলো জ্বালানোর প্রয়োজনে কেরোসিন ল্যাম্পের ব্যবহার হয়। দিনের বেলায় মহিলাদের বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে হয় ফলে তাঁরা অর্থকরী কাজ করে ওঠার সময় বের করে উঠতে পারেন না। কেরোসিন ল্যাম্প থেকে দুর্ঘটনা ঘটে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বাড়ির লোকজনের জন্য রান্না করাটা মহিলাদের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অন্তর্গত। যদিও মহিলারা শক্তির মুখ্য ব্যবহারকারী কিন্তু এ পর্যন্ত যে সব শক্তিনীতি বানানো হয়েছে তাতে পুরুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীই প্রাধান্য পেয়েছে। মহিলাদের কেবলমাত্র ব্যবহারকারী হিসাবে দেখা হয়েছে। তাঁদের মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শক্তি সংক্রান্ত কর্মসূচি আরও বেশি কার্যকর করা সম্ভব যদি এ ব্যাপারে মহিলাদের দিকটায় বেশি নজর দেওয়া হয় কারণ তাঁরাই বাড়িতে শক্তির মূল ব্যবহারকারী।
বিরক্তিকর ও শ্রমসাধ্য কাজ থেকে মহিলারা মুক্তি পেলে এবং আলো জ্বালানো, রান্না করা এবং অন্যান্য গৃহকর্ম করতে তাঁদের জন্য দূষণমুক্ত শক্তির ব্যবস্থা করা গেলে তাঁদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, সাক্ষরতা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কাজকর্মের সুযোগ ও গোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্মতার বিষয়গুলির উপর নাটকীয় প্রভাব পড়বে। মহিলাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি পরিবার ও গোষ্ঠীর উপরও অত্যন্ত কার্যকর প্রভাব ফেলবে। সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য পরিষ্কার এবং সস্তার শক্তির লভ্যতা প্রাথমিক শর্ত। লিঙ্গ-বান্ধব প্রযুক্তি যেমন, এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার, উন্নত চুলার ব্যবহার, সৌরলন্ঠন ইত্যাদি নানা ভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করতে পারে।
নীচে কিছু লিঙ্গ-বান্ধব প্রযুক্তির তালিকা দেওয়া হল --
লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)
সূত্র : InDG
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/16/2020