দূষণের জেরে হারিয়ে গিয়েছে নদীর গভীরতা। জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করলা নদী বিপন্ন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পরিবেশপ্রেমীদের। নদী সংস্কারে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি হলেও, তার রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
এক সময়ে দিনবাজার থেকে পণ্য বোঝাই নৌকা করলা দিয়ে কিংসাহেবের ঘাটে পৌঁছত। থার্মোকল, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মতো আবর্জনায় ভরা নদীতে নৌকা চলা অসম্ভব বলে দাবি। স্রোত হারিয়ে, নদীতে বেড়েছে শ্যাওলা। গেঁজে ওঠা দূষিত ফ্যানা ভেসে বেড়াচ্ছে নদী জুড়ে। শহরের সমাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৌতম সরকার অভিযোগ করে বলেন, “বিভিন্ন নিকাশি নালা এসে নদীতে পড়েছে। দূষণে জেরবার করলা রুগ্ন, শীর্ণ হয়ে এখন ধুঁকছে। দূষণ এতটা বেড়েছে যে নদী পাড়ে খানিকক্ষণও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না।”
বিভাগীয় শহরকে দু’ভাগে ভাগ করে তিরতির করে বয়ে চলেছে করলা। নদীর একদিকে প্রশাসনিক কার্যালয়, হাসপাতাল, সংশোধনাগার। অন্যদিকে রয়েছে বানিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জলঢাকা, রায়ডাকের মতো ওই নদী পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসেনি। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে উপন্ন হয়ে শহরের পেট চিরে এখন কাদোবাড়ির কাছে তিস্তায় মিলেছে। আগে তিস্তার সঙ্গে মিলনস্থল ছিল কিংসাহেবের ঘাট। গবেষকদের একাংশের মতে, করলার উৎসস্থলে বেপরোয়া ভাবে বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয় উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। যার জেরে নদীবক্ষ গভীরতা হারিয়েছে। যদিও পরিবেশ ও নদী বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, “শুধু গভীরতা কমে যাওয়ার সমস্যা নয়। শহরের নিকাশি নালা দিয়ে আসা দূষিত জল করলার সর্বনাশ বেশি করেছে। নদীকে বাঁচাতে দূষিত জল ফেলা বন্ধ করতে হবে।”
সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। তিনি বলেন, “নদীর বেহাল পরিস্থিতি দেখে পুরসভার উদ্যোগে চার বছর আগে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে করলা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়। আর্থিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্পে সংরক্ষণ, সৌন্দর্যায়ন ছাড়াও শহরের বিভিন্ন নিকাশি নালার জল পরিশোধন করে নদীতে ফেলার মতো একগুচ্ছ পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা। তিনি বলেন, “টাকা পাওয়া গেলে করলার ছবি পাল্টে যাবে। তবে বসে না থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহযোগিতায় কিং সাহেবের ঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদীর এলাকা সম্প্রসারণ এবং স্পোর্টস কমপ্লেক্স লাগোয়া এলাকায় নদীর সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে।”
পুরকর্তাদের ব্যাখ্যা মানতে অবশ্য নারাজ বিরোধী শিবির। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। পুরসভার বিরোধী দলনেতা প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “বছরের পর বছর ওই কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। নদী শেষ হয়ে গেলেও বাস্তবে পুরসভার হেলদোল নেই। চিন্তা থাকলে এতটা সর্বনাশ হত না।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020