বর্জ্য পুড়িয়ে উৎপন্ন দূষণ এড়ানোর কিছু উপায় থাকলেও তা সহজ নয় —এনেরোবিক ডাইজেশন বা অক্সিজেন-রহিত পদ্ধতিতে বায়োগ্যাস আর সিএনজির মতো গ্যাস তৈরি করা, জৈব সার তৈরি, প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে এক একটা জিনিস ফেলে দেওয়ার আগে যত ভাবে সম্ভব ব্যবহার করা। কিছু ফেলতে হলে তা নির্ধারিত জায়গায় ফেলা যেখান থেকে পৃথকীকরণ করা সহজ। এর জন্য দরকার জনশিক্ষা। জনশিক্ষার প্রসার ছাড়া পরিবেশ বিষয়েও সচেতনতা গড়ে ওঠে না। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ দিকে কতটা গুরুত্ব দেন তা সহজেই অনুমেয়। পৃথকীকর বর্জ্য পোড়ানো যেমন বিপজ্জনক, তেমনই তা ব্যবহার করাও মুশকিল। কারণ এগুলি দূষণের প্রাথমিক সূত্র। আজকাল বৈদ্যুতিন বর্জ্য সমস্যটি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যে কারণে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে বৈদ্যুতিন বর্জ্য সাফ করার জন্য আলাদা কোম্পানির জন্ম হয়েছে। ভারতেও সম্প্রতি এ ধরনের কয়েকটি কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। তা ছাড়া সব কিছু পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাওয়াটা ‘সার্বিকভাবে জনকল্যাণ’ কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। প্রকল্প শুরু করার আগে জনসাধারণের যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দরকার তা হল— এ কোন আধুনিক প্রক্রিয়া যা কিনা কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারবে? জল ও বাতাস থেকে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয় তা কার্বনমুক্ত বলা যেতে পারে। কারণ এখানে কোনও কিছু পোড়ানোর দরকার হয় না। কিন্তু পুড়িয়ে তৈরি করা বিদ্যুৎ কী ভাবে ৯৮ শতাংশ কার্বনমুক্ত বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন? এই পদ্ধতিতে যে গ্যাস উদ্ধার হবে তার থেকে ডায়াক্সিন কী করে বের করে নেওয়া হবে? তা যাবেই বা কোন দিকে? ফ্লাই অ্যাশই বা কোথায় ফেলা হবে? বহু লোকের চাকরির সংস্থানের খবরে এলাকার মানুষ আশাবাদী হবেন ঠিকই।
কিন্তু স্বাস্থ্য বাজি রেখে? প্রকল্পটির জার্মান বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকেরও কোনও বিশেষ স্বার্থ জড়িয়ে নেই তো? এই প্রকল্পটি যেন আরও একটি ভোপাল হয়ে না দাঁড়ায়। সে দিকে হাওড়ার মানুষকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শুধু কথার কথায় ভুললে চলবে না। অতীতে সব দিক বিবেচনা করে না এগোনোর ফলশ্রুতি অসংখ্য বার ভুগতে হয়েছে। যে জন্য এ বার দরকার যথার্থ গবেষণা ও ক্ষেত্রসমীক্ষা করে সব কিছু দেখে নেওয়ার।
সূত্র : এই সময়, ১৬ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020