প্রয়োজনীয় বর্জ্য পাওয়া না গেলে হাওড়ার ৩৭০০ কোটি টাকার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। বিদ্যুৎ তৈরি করা যায় তখনই যখন এক সঙ্গে অনেকটা তাপ উৎপন্ন করা যায়। ভারতের ভেজা ময়লা থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ তৈরি হওয়া সম্ভবই নয়, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সিইএসসির গ্রিডে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তুলনা করা যাক সিঙ্গপুরের সঙ্গে, যেখানে বর্জ্য পুড়িয়ে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। গুগুল করে যদি দেখেন তো জানতে পারবেন যে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরই ছিল পৃথিবীর সব চেয়ে ব্যস্ত বন্দর। ফ্রি পোর্ট হিসাবে সিঙ্গাপুর অন্যতম। বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণে প্যাকিং বর্জ্য। যে সব পুড়িয়ে এতটাই তাপ উৎপন্ন হয় যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায় পুরোদমে। কলকাতার বন্দর কিন্তু পৃথিবীর পঞ্চাশটা বন্দরের মধ্যেও পড়ে না। হাওড়া স্টেশনের বাণিজ্যের হারও যৎসামান্য।
বর্জ্য পোড়ানোর একটা ফল যেটা অবশ্যই পাওয়া যাবে তা কাজে লাগানোর বা শুধু ফেলে দেওয়ার আগে অনেক কমের পরিশোধন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে যখন হাওড়া প্রকল্পে বর্জ্য পৃথকীকরণ করার কথা ভাবা হচ্ছে না, তখন দূষণের কথা আরও বেশি করে ভাবতে হবে। কী না থাকে আঁস্তাকুড়ে—কেমিক্যাল ভরা ব্যাটারি, বাতিল ওষুধপত্র, নানা রকমের প্লাস্টিকের বোতল, নাইলনের কাপড়, কম্পিউটার আর মোবাইলের যন্ত্রাংশ, এমনকী পিভিসি পাইপও। এই সব যদি কলার খোসা, ডিমের খোসার সঙ্গে পুড়তে থাকে তা হলে কারখানার আশেপাশের দূষণ নিমেষে সব মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এর ছাই বা ফ্লাই অ্যাশও যেখানে সেখানে ফেলা যায় না। বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা ল্যান্ডফিলেই ফেলতে হয়। তবুও ছাইয়ের সূক্ষ্ম গুঁড়োগুলো বাতাসে ভেসে বেড়িয়ে হাঁপানি রোগ, ক্যানসারের মতো রোগ বাড়ায়। ময়লা পোড়ানো বা ইনসিনারেশন নিয়ে সারা দুনিয়ায় চলছে তর্ক বিতর্ক। একটা বড় সমস্যা হল একটা অবাঞ্ছিত জিনিসের নিষ্পত্তি করতে আর একটা ঝামেলা এসে হাজির হয়।
সূত্র : এই সময়, ১৬ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020