যেখানে ধোঁয়া সেখানে আগুন থাকার যুক্তি অকাট্য হলেও ঠিক কতটা ধোঁয়ার পিছনে কতটা আগুন জ্বলছে,তা নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে। ভেজা কাঠে অনেক সময় ধোঁয়াই সার। কখনও দপ করে জ্বলে উঠে সহসা নিভে যায়। শুকনো জিনিসে আগুনের ছোঁয়া লাগলে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে সময় লাগে না, সে তো সবারই জানা। প্রশ্ন হল, হাওড়া পুরসভার বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের এক ‘নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক’ আয়োজনকে ঘিরে — কী পুড়ছে তা থেকে আদৌ বিদ্যুৎ তৈরি হবে কি না। তার চেয়েও বড় কথা হল, এর জন্য ওই এলাকার মানুষের আর কী কী দাম দিতে হতে পারে। সব দিক না ভেবে বর্জ্য পোড়াতে শুরু করাটা মোটেই সমীচীন কাজ নয়।
ভারতের সাধারণ মানুষ যে বর্জ্য তৈরি করে তাতে শুকনো কাগজ কার্ড বোর্ড বা প্যাকিং বাক্স কমই থাকে। আস্তাকুঁড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে এক বার চোখ বুলিয়ে নিলেই চোখে পড়বে কলার খোসা, সবজির খোসা, পাতা, বাসি ডাল, ভাত, ডিমের খোলা, মাছের আঁশ, ন্যাকড়া, মাটি পাথর আর ধুলো। মিষ্টির রসে ভেজা বাক্স, দইয়ের ভাঁড়,কিছু ময়লা প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট বা থার্মোকলের থালাবাটি। কোনওটাই দেখে খুব একটা দাহ্য বলে মনে হয় না। দাহ্য হওয়ার ক্ষমতাকে বলে ক্যালোরিফিক ভ্যালু। ভারতের বর্জ্যে চিরকালই ক্যালোরিফিক ভ্যালু কম। আগে আরও কম ছিল। এখন শহরাঞ্চলে মানুষের রকমারি জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা ও সুযোগ দুইই বেড়েছে। ফলে আঁস্তাকুড়েও অনেক কাগজ ও প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু তবুও বিদেশের উন্নত অর্থনীতির পাশে সেটা কিছু নয়। আর কাগজ কুড়োনির দল তাও সময়মতন সরিয়ে নেয়। আশপাশের ব্যবসা, বাণিজ্য কারখানা থেকে হয়তো বা পাওয়াও যায় কিছু বেশি কাগজ, কাঠ আর কিছু ধাতব বা প্লাস্টিকের বাতিল করা ছাঁটাই মাল। তার উপর ভরসা করে ৩৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প চালু করার আগে কিছু গবেষণা অবশ্যই প্রয়োজন।
সূত্র : এই সময়, ১৬ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/20/2020