স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ নাইট্রিক অ্যাসিড এবং সালফিউরিক অ্যাসিড সম্বলিত ভিজে ও শুকনো পদার্থর মিশ্রণ বাতাস থেকে ঝরে পড়াকে সচরাচর বৃহত্তর অর্থে ‘‘অ্যাসিড বৃষ্টি’’ বলা হয়ে থাকে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলির ও অ্যাসিড বৃষ্টির উৎস মূলত প্রাকৃতিক সূত্র ও মানুষের ক্রিয়াকর্ম। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে পড়ে আগ্নেয়গিরি, উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাওয়া। মানুষের নিত্য দিনের কাজকর্মের (জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো) ফলে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়ে অ্যাসিড বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি করে। এই পদার্থগুলি বাতাসে জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন এবং বাষ্পীভূত অন্য রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে মিশে নানা ধরনের অ্যাসিড যৌগ তৈরি করে। এর থেকে সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডের হাল্কা দ্রবণ তৈরি হয়। শিল্প থেকে উৎপন্ন সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে মেশে এবং হাওয়া দিলে তা বহু শত মাইল উড়ে যেতে পারে।
অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে লেক এবং অন্যান্য জলধারায় অ্যাসিড মেশে, যে কারণে উঁচু জায়গার গাছগুলির ক্ষতি হয় (যেমন ২ হাজার ফুটের উপরে রেড স্প্রুস গাছ) এবং স্পর্শকাতর অরণ্যভূমিরও ক্ষতি করে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বাড়ির ইমারতি দ্রব্য ও রঙের ক্ষতি হয়। জাতীয় সৌধ বা মর্মর মূর্তিগুলি, যেগুলি আমাদের জাতীয় সম্পদ হিসাবে পরিচিত, সেগুলিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভূপৃষ্ঠে পড়ার আগে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস এবং তাদের নানা ধরনের কণা, সালফেট ও নাইট্রেট, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করে ও জনস্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
অ্যাসিড বৃষ্টি কমানোর নানা রকম উপায় রয়েছে। অর্থাৎ ঠিকমতো বলতে গেলে অ্যাসিড জমা হওয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় আছে। ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগ বা সামাজিক উদ্যোগে এই ব্যবস্থাগুলি নেওয়া সম্ভব। শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বে যেখানেই জনবসতি রয়েছে সেখানে অ্যাসিড জাতীয় পদার্থের জড়ো হওয়া আটকানো বেশ সমস্যার কাজ। কিন্তু যদি তা করা যায় তা হলে এক দিকে যেমন বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রাকৃতিক আবাসস্থল যেমন রক্ষা পাবে, তেমনই মানুষের তৈরি কাঠামোগুলি রক্ষা পাবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/22/2020