জলবায়ুর পরিবর্তন মানবসমাজের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ০.৩ থেকে ০.৬০ সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে। আমাদের কাছে এই বৃদ্ধি অতি অল্প মনে হতে পারে কিন্তু এর ফলে নিম্নলিখিত বিপর্যয়গুলি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জনসংখ্যার বৃদ্ধি খাদ্যের চাহিদাও ক্রমশ বাড়াচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটাবে এবং তা সরাসরি কৃষি উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলবে। তা ছাড়া মাটির গুণাগুণ, কীট এবং রোগের চরিত্রের উপরও জলবায়ু পরিবর্তনের পরোক্ষ প্রভাব পড়বে। বলা হচ্ছে, ভারতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমতে পারে। চরম জলবায়ু যেমন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরা প্রভৃতি শস্য উৎপাদনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
উষ্ণ জলবায়ু বৃষ্টিপাতের ধারা পরিবর্তন করে বন্যা ও খরার প্রকোপ বাড়াবে, গ্লেসিয়ার ও মেরুর বরফ-চাদর আরও বেশি করে গলবে, ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে। বলা হচ্ছে, গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ তাপমাত্রার বৃদ্ধি।
জলবায়ুর পরিবর্তনের অন্যতম পরিণাম হল সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়া। মহাসমুদ্র উত্তপ্ত হওয়া, গ্লেসিয়ার ও মেরুর বরফ-চাদর ক্রমাগত গলে চলার ফলে এই শতাব্দীতেই সমুদ্রের জলস্তর প্রায় আধ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সমুদ্রতল বেড়ে গেলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে তার খারাপ প্রভাব পড়বে –ভূমিক্ষয় ও প্লাবনের ফলে জমির পরিমাণ কমবে, বন্যা বেশি হবে, সমুদ্রের লোনা জল ঢুকে পড়বে বসতি অঞ্চলে। যার ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলের কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পানীয় জলের উৎসের উপরও প্রভাব পড়বে এবং মানুষের বসতি, রুজি ও স্বাস্থ্যের উপরও এই ঘটনার খারাপ প্রতিক্রিয়া হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন মানুষের স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তাপজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে, সংক্রামকের রোগের বিস্তার হবে, ডিহাইড্রেশন হবে, অপুষ্টি বাড়বে এবং জনস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্বাভাবিক প্রকৃতিতে বড় হওয়া উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে মারাত্মক রকম সংবেদনশীল। যদি জলবায়ু পরিবর্তনের হার বাড়তে থাকে তা হলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবী থেকে মুছে যেতে পারে।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/14/2020