কেন এই ধরনের প্রকল্প? সংস্থার অন্যতম কর্ণধার মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র গবেষক অভিমন্যুর কথায়, কয়েক বছর আগে কোরিয়া, মালয়েশিয়া ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ই ওদের সঙ্গে আমাদের দেশের পার্থক্যটা টের পাই। ওখানে পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। আর এখানে রাস্তাঘাটে, আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। তার পর থেকেই পরিষ্কার পরিবেশ গড়তে এই পদ্ধতি মাথায় আসে। তা হাতেকলমে প্রয়োগের সুযোগ মেলে ওই প্রতিযোগিতায়।
তার পর আইআইটির আইন বিভাগের পড়ুয়া অনন্যা রায়, বিশ্বরূপ ঘোষ, বিটেকের ছাত্র বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে নিয়ে যাত্রা শুরু। আইআইটির নিয়ন্ত্রিত স্টেপ নামক একটি সংস্থার কাছ থেকে অদূরে গোপালীতে ১ একর জমি বছরে ২৪ হাজার টাকার বিনিময়ে লিজে নেয় তাঁরা। স্থানীয় কিছু শ্রমিকও বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছেন এই প্রকল্পে।
সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে আইআইটিও। ‘গ্রিন ইনিশিয়েটিভ প্রজেক্টে’ এই পড়ুয়াদের দিয়েই সাতটি হোস্টেলের আবর্জনা মুক্ত করার টেন্ডার দিয়েছেন তাঁরা। ওই বর্জ্য জলীয় ও শুষ্ক এই দু’টি ভাগে আলাদা করে গোপালীর প্রকল্প এলাকায় ফেলা হচ্ছে। তা থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ‘গ্রিন ইনিশিয়েটিভ প্রজেক্টে’র আইআইটির অধ্যাপক সদস্য নিশীথরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘দূষণ কমাতে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার জরুরি। তা থেকে একটা আয়েরও সুযোগ রয়েছে।” পড়ুয়াদের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এই মডেল বেকার যুবকরা শিখে নিজেরাই এই ধরনের প্রকল্প করতে পারবে।” জৈব সার বা গ্যাস ছাড়াও জঞ্জাল থেকে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদনের ভাবনাও রয়েছে আইআইটির গবেষকদের। প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতার জন্য গবেষক দলের তরফে ‘গ্রিন ইনিশিয়েটিভ প্রজেক্টে’ ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। অভিমন্যু বলেন, “প্লাস্টিক পেট্রোলিয়াম পদার্থ, তাই তা থেকে ৯০ ভাগ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। দেশের কোথাও এখনও পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজেল তৈরি হয় না।”
ইতিমধ্যেই প্রথম দফার উৎপাদিত সার অধ্যাপকদের বাড়ির বাগানের জন্য বিক্রি হয়েছে। সারা মিলেছে অন্য জেলা থেকেও। সংস্থার সদস্য বিটেকের পড়ুয়া বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সমাজ থেকে আবর্জনা মুক্ত করে আয়ের উৎস খোঁজা। দলের তরফে পূর্ব মেদিনীপুরের এক কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। উনি আগ্রহ দেখিয়েছেন।” আগ্রহী জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিকও। তিনি বলেন, জেলা পরিষদে, “জেলা পরিষদে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু টাকা রয়েছে। আইআইটির পড়ুয়াদের প্রযুক্তি শিখে চাষিরা জৈব গ্যাস তৈরি করে বেশি মুনাফা করতে পারলে ভালো হবে।
আইআইটি পড়ুয়াদের এই চেষ্টায়, দেশের জঞ্জাল সত্যিই মুক্ত হয় কিনা, দেখার সেটাই।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ এপ্রিল ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019