বিশ্ব উষ্ণায়ন হল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। এই গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণই হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। যাকে এক কথায় বলে কার্বন এমিশন। ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল যত বেশি পোড়ানো হয় কার্বন এমিশন ততই বাড়ে। আর এর জন্যই ঘটে জলবায়ুর পরিবর্তন।
সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর যেমন বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হয়, ম্যালেরিয়া এবং নতুন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তেমনই কৃষি উৎপাদনশীলতা কমে যায়।
তথ্য বলছে ২০০৭ সালে আমাদের দেশ থেকে যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়েছিল তা ১৭২৭.৭১ কোটি টন কার্বনের সমান। এর সিংহভাগই এনার্জি সম্পর্কিত ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার এনার্জি ক্ষেত্র থেকে যতটা গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয় তার প্রায় ৬৫ শতাংশ অংশই নির্গত হয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্র থেকে বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে। কারণ একটাই, কয়লা এবং অন্যান্য ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার।
দেখা গিয়েছে, ভারতে মোট কার্বন এমিশনের ৫১ শতাংশ হয়েছে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ক্ষেত্র থেকে। পশ্চিমবঙ্গে মোট বিদ্যুতের যে উৎপাদন হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে ফসিল ফুয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে।
২০০৬ সালে প্রকাশিত ভারতের ইন্টিগ্রেটেড পলিসিতে বলা হয়েছিল, ২০৩১-৩২ সাল পর্যন্ত ভারতকে যদি ৮ শতাংশ করে বৃদ্ধির হার বজায় রাখতে হয় তা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহু গুণ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কখনওই যেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। তার জন্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্র থেকে কার্বন এমিশন কমানোর কথা বারেবারে বলা হয়েছে। সেই জন্য ফসিল ফুয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি অচিরাচরিত বিদ্যুৎ শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী বৈদ্যুতিক উপকরণগুলিকে সহজলভ্য করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে বিদ্যুৎ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত উপভোক্তাদেরও বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। যেমন—বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী বৈদ্যুতিক উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো, বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করা, শীতকালে গিজারের পরিবর্তে সোলার ওয়াটার হিটিং সিস্টেম এবং জেনারেটর বা ইনভার্টারের বদলে সোলার হোম লাইটিং ব্যবহার করা।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020
জীবাশ্ম জ্বালানি ছেড়ে এ বার অন্য উৎস ব্যবহারের কথা...