জৈবভরকে গ্যাসে পরিণত করাটা হল জৈবভরের তাপ-রাসায়নিক রূপান্তর ঘটিয়ে দাহ্য গ্যাস মিশ্রণ (প্রডিউসার গ্যাস) তৈরি করা। পুরো দহনক্রিয়ার জন্য তাত্ত্বিক ভাবে যতটা প্রয়োজন বাতাসের প্রবাহ তার চেয়ে কম রেখে আংশিক দহনক্রিয়া ঘটিয়ে এই কাজ করা হয়। প্রডিউসার গ্যাসের উপাদানগুলি নিম্নরূপ --
সচরাচর প্রচলিত গ্যাসিফায়ারে কাঠ/কাঠের মতো জৈবভর ব্যবহার করা হয়; কিছু গ্যাসিফায়ারে অবশ্য ধানের তুষ ব্যবহার করা যায়। কাঠ ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জৈবভরকেও গ্যাসিফায়ারের মাধ্যমে গ্যাসে রূপান্তর করা সম্ভব। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গ্যাসিফায়ার এমন হতে হবে যাতে সেই পদার্থের উপযোগী হয় এবং বহু ক্ষেত্রেই জৈবভরকে এমন ভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে যাতে তা নিরেট হয়।
গ্যাসিফায়ার ‘আপড্রাফট’ বা ‘ডাউনড্রাফট’-- দু’ ধরনেরই হয়। ডাউনড্রাফট গ্যাসিফায়ারে জ্বালানি ও হাওয়া একই দিকে বা ‘কো-কারেন্ট’ ভাবে চলাচল করে। আপড্রাফট গ্যাসিফায়ারে জ্বালানি ও হাওয়া ‘কাউন্টার কারেন্ট’ বা বিপরীত মুখে চলাচল করে। কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই বিক্রিয়া ঘটার জায়গা একই থাকে।
উপর থেকে রিঅ্যাক্টরে জ্বালানি ভরা হয়। জ্বালানি নামার সময় তা শুকোয় এবং পাইরোলিসিস হয়। অক্সিডেশন এলাকার মধ্যে বায়ু সংযুক্ত করা হয়। পাইরোলিসিস থেকে প্রাপ্ত পদার্থ ও কঠিন জৈবভরের মধ্যে আংশিক দহনক্রিয়ার ফলে তাপমাত্রা ১১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে যায়। এর ফলে ভারী হাইড্রোকার্বন ও টার ভেঙে যায়। এই পদার্থগুলি নীচে নেমে রিডাকশন অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সেখানেই উত্তপ্ত চারকোলের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় প্রডিউসার গ্যাস তৈরি হয়। গরম ও নোংরা গ্যাস কুলার, ফিল্টার ও ক্লিনারের মধ্য দিয়ে চালনা করে ইঞ্জিনে পাঠানো হয়।
পরিষ্কার প্রডিউসার গ্যাস ডুয়াল-ফুয়েল আইসি ইঞ্জিন (যেখানে ডিজেলের পরিবর্তে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রডিউসার গ্যাস ব্যবহৃত হয়) বা ১০০ শতাংশ গ্যাস-ফায়ারড স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। উষ্ণ করার ক্ষেত্রে প্রচলিত শক্তির বদলে প্রডিউসার গ্যাস ব্যবহার করে ছোট বয়লার, ফারনেস, হট এয়ার জেনারেটর, ড্রায়ার চালানো যেতে পারে।
জৈবভর-ভিত্তিক গ্যাসিফায়ার কয়েক কিলোওয়াট থেকে একটা মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমকক্ষ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে। তাপ উৎপাদক যন্ত্রে ইউনিট সাইজের উর্ধ্বসীমা প্রতি ঘণ্টায় ২০০-৩০০ কেজি তেল পোড়ানোর সমান।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জৈবভর-ভিত্তিক গ্যাসিফায়ার ব্যবস্থায় খরচ পড়ে প্রতি মেগাওয়াটে ৪ কোটি থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ নির্ভর করে জৈবভরের দাম, বিদ্যুৎকেন্দ্রের লোড ফ্যাক্টর ইত্যাদির উপর। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, তা প্রতি কিলোওয়াট-আওয়ারে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ টাকার মধ্যে। তাপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ক্ষমতা ১০ লক্ষ কিলোক্যালোরি হলে মূলধনী খরচা পড়ে ০.৫ থেকে ০.৭ কোটি টাকা।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019