যে সব গ্রাম প্রত্যন্ত, দুর্গম অঞ্চলে, যেখানে সাধারণ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া খুব দুরূহ, সেই সব গ্রামই সৌরশক্তি ব্যবহারের উপযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়। সন্তোষ দলিত-প্রধান গ্রাম বালাজি-কি-ধানির বাসিন্দা। গ্রাম অর্থে পাঁচ একর জমির উপর ছড়িয়ে থাকা ২০টি ছোট ছোট কুঁড়েঘর। তা-ও সেই ছোট্ট গ্রাম বেড়া দিয়ে ঘেরা।
অষ্টাদশ শতাব্দীর পাতা থেকে তুলে আনা এই গ্রামের একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে সন্তোষের একতলা পাকা বাড়ি যেখানে তিনি তাঁর স্বামী, বাচ্চা এবং আত্মীয়দের নিয়ে বসবাস করেন। বাড়িটিতে দু’টি শয়নকক্ষ রয়েছে, উঠোনে দু’টি মাটির ঘরও আছে --এর একটি ছাগলের থাকার জন্য, অন্যটি রান্নাঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সংলগ্ন আর একটি ঘর ব্যবহৃত হয় সন্তোষের কর্মশালা হিসাবে। এই ঘরে তিনি দিনের অন্তত ছ’ঘণ্টা কাটান সৌর লণ্ঠন মেরামতির কাজে। সৌর ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে তিনি যে টাকা রোজগার করেছেন তাই দিয়েই এই বাড়িটি বানিয়েছেন। তাঁর জন্যই গ্রামের অন্যান্য বাড়িতেও এখন সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
‘খালি পা’ মডেল অনুযায়ী মাসে তাঁরা যত টাকা কেরোসিন, ব্যাটারি, কাঠ ও মোমবাতির পিছনে খরচ করতেন তত টাকাই মাসিক ফি হিসাবে দিতে হয়। এর মধ্যে একটা অংশ সৌর ইঞ্জিনিয়ারের স্টাইপেন্ড হিসাবে খরচ হয়। বাকি টাকায় বিভিন্ন সৌর যন্ত্রাংশ কেনা হয়। উচ্চবর্ণের হিন্দু, ষাট বছরের ছোটি দেবী সন্তোষের ঠিক পাশের বাড়িতেই থাকেন। তিনি সৌর আলোর প্রশাংসায় পঞ্চমুখ। তাঁর মন্তব্য, “আলো আছে বলে রাতে ঠিকমতো বিছানা করতে পারি। বর্ষাকালে বহু বিষাক্ত পোকামাকড় বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু এখন আলোর ব্যবস্থা থাকায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। লণ্ঠনের সাহায্যে আমরা গরু-বাছুরও ঠিকমতো দেখভাল করতে পারি। সন্ধ্যায় ঠিকমতো তাঁদের গোয়ালে ফিরিয়ে আনতে পারি।”
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/27/2019