নবায়নযোগ্য নাম থেকে তোমরা সহজেই বুঝতে পারবে এরঅর্থ কি বুঝায়। যা কিছুনবায়ন করা যায়। এক্ষেত্রে কোন জিনিস ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে পুনরায় ঐ জিনিসটি দ্বারা আবার শক্তি উৎপাদন করা যায়। অর্থাৎ যে শক্তির উৎসকে বারবার ব্যবহারকরা যায় তাই হল নবায়নযোগ্য শক্তি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সূর্যরশ্মি, বায়োগ্যাস, জল, বাতাস, জলর জোয়ার ভাটা, ভূ-চাপ ইত্যাদি।
নিম্নে আমরা বায়োগ্যাস, সৌর শক্তি, জলর জোয়ার-ভাটা এবং বায়ু হতে নবায়নযোগ্য শক্তির উপাদানগুলো বর্ণনা করা হলো:
গরু, ছাগল, ঘোড়া ও মহিষের বিষ্ঠা জ্বালানি হিসাবে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাণীর এসব বিষ্টা শক্তির এক প্রকার উৎস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুকনো গোবর শুকিয়ে পুড়িয়ে তাপশক্তি উৎপন্ন করা হয়। বায়োগ্যাসে যে সকল উপাদান বা বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হল গরু, শুকর এবং মুরগী হতে প্রাণীজ সার, শস্য ও পরিত্যক্ত উদ্ভিদ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রাণীজ সার বা কেবলমাত্র উদ্ভিদজ উপকরণ অথবা উভয় প্রকারের মিশ্রণও ব্যবহার করতেপার। শুকর বা মুরগী রাখার জায়গা থেকে মল মিশ্রিত যে কাঁচা খড় পাওয়া যায় সেগুলো বয়োগ্যাস তৈরির উপযুক্ত প্রাণীজসার ও উদ্ভিদজ উপকরণের ভাল মিশ্রণ। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় ছোট ছোট টুকরা নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে প্রথমে আরম্ভ করার সময় ব্যবহারের আগে শুকনো উদ্ভিজ উপকরণগুলো খুব ছোট ছোট করে কেটে অথবা (পিসে খোসা বার করে) নিতে হয়। আর টাটকা উদ্ভিজগুলো অন্তত: দশদিন বাইরে পচতে দিতে হবে।
আদিম মানুষ ভয় পেত বায়ুকে। সভ্যতার বিকাশ ও বিজ্ঞানের ক্রম বিকাশের ফলে এই বায়ুকে মানুষ তার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। আদিম মানুষ চার-পাঁচটা পাখার সাহায্যে চক্র বানিয়ে বাতাসের সাহায্যে চক্রঘুরাত। চক্রের ঘর্ষণ কাজে লাগিয়ে মানুষ কুয়া থেকে জল তোলা, কৃষিসেচ, যব অথবা গম ভাঙ্গানো, আখ মাড়াই, ধানকাটা, খড় কাটা ইত্যাদি কাজ করত। পরে মানুষ বাতাসকে কাজে লাগিয়ে কাঠ চেরাইয়ের মত কঠিন কাজও সম্পন্ন করেছে। পৃথিবীর বহু অঞ্চলের আগে মানুষ এ ধরনের কাজে বড়বড় চক্রাকার এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করত। যা বর্তমানে হাওয়া বা বায়ুকল বা উইন্ডমিল নামে পরিচিত। কিন্তুবর্তমানে এর ব্যবহার কমে গেছে। কিন্তুআবার এর ব্যবহার মানুষের চিন্তায় এসে পড়েছে। পরিবেশ দূষণও প্রাকৃতিক শক্তির অপ্রাপ্ততার কথা চিন্তা করে মানুষ আবারও এই উইন্ড মিলের প্রয়োজনের কথা ভাবছে।
নদী বা সমুদ্রের জলর জোয়ার-ভাটারশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রচালনার ব্যাপারটি অনেক দিন আগেই উদ্ভাবিত হয়েছে। কিন্তুজোয়ার-ভাটার শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরের ব্যাপারটি খুব বেশি দিনের নয়। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সৌরশক্তি। আমরা জানি সূর্য সকল শক্তির উৎস। পৃথিবীতে যতশক্তি আছে তার সবই কোন না কোনভাবে সূর্য থেকে আসা বাসূর্য কিরণ ব্যবহৃত হয়েই তৈরি হয়েছে। যেমন আধুনিক সভ্যতার ধারক জীবাশ্ব জ্বালানি আসলে বহুদিনের সঞ্চিত সৌরশক্তি।
কাজ:সৌরশক্তি উৎপন্ন করা
প্রয়োজনীয় উপকরণ: আতশী কাঁচ/ধাতব চাকতি
পদ্ধতি:প্রথমে একটি আতশী কাঁচ নাও। আতশী কাঁচের সাধারণত একটি উত্তল লেন্স থাকে । লেন্সের সাহায্যে সূর্যরশ্মিকে ফোকাস কর। দেখবে যথাযথ ফোকাস করলে আগুণ জ্বলে উঠবে। অনুরুপভাবে, একটি ধাতব চকচকে চাকতি দিয়ে সূর্য কিরণকে প্রতিফলিত কর। এর ফলে সৌর চুলা তৈরি হয়। এই সৌর চুল−ীর সাহায্যে আমরা সহজেই রান্না করতে পারি।
এছাড়া সৌর শক্তিকে শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। শস্য, মাছ, সবজি, শুকানোর কাজে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়। মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরি করে তা বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। সৌর শক্তি দ্বারা বয়লারে বাষ্প তৈরি করেও তার দ্বারা তড়িৎ উৎপাদনের জন্য টার্বাইন ঘুরানো হয়। আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে সৌরকোষ। সৌরকোষের বৈশিষ্ট্য হল এর উপর সূর্যের আলো পড়লে তা থেকে সরাসরি তড়িৎ পাওয়া যায়। এছাড়া সৌরকোষের রয়েছে নানা রকমের ব্যবহার।
নবায়নযোগ্য শক্তির অনেক রকম সুবিধাপাওয়া যায়। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শক্তিরচাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই শক্তি এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেবায়োগ্যাস পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি উন্নতমানের জৈব সার পেতে সাহায্য করে। দূষণমুক্ত পরিবেশের সহায়ক হয়। স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে। কৃত্রিম উপগ্রহে তড়িৎশক্তি সরবরাহের জন্য সৌরকোষ ব্যবহৃত হয়।বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমন: পকেট ক্যালকুলেটর, পকেট রেডিও, ইলেকট্রিনিক ঘড়ি সৌরশক্তির সাহায্যে চালানো যায়। মূলত: নবায়নযোগ্য শক্তির প্রধান সুবিধা হল এটি নবায়নযোগ্য, এটি কখনো শেষ হয়ে যাবে না। নিচে এর সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হল।
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রয়োজনীয়তা যেমন আমাদের দেশে অনস্বীকার্য তেমনি এর প্রাপ্ততা অনেকটা সহজ। বলা যায় নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশে আমাদের দেশ একটি মাইলফলক হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আমাদের এখনই নিতেহবে। অনেক অঞ্চলে আছে যেখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। সেখানে আমরা সহজেই সৌরশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ পেতে পারি। তাছাড়া বায়োগ্যাস উৎপাদনে রয়েছে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা। যদিও আমাদের দেশ মোটামুটি প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধতথাপি আমাদের এই বিকল্প শক্তির সন্ধান অবশ্যই করতে হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসকে আমাদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে সরবরাহ করাতে প্রচুর খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলতে পারি সেক্ষেত্রে আমরা দ্বৈত সুবিধা পাব। প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমরা জমির চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সারের চাহিদাও মেটাতে সক্ষম হব। এছাড়া কৃষিনির্ভর এই দেশে নি:সন্দেহে বায়োগ্যাসের উপাদান খুবই সহজলভ্য। সুতরাং আমাদেরকে ভবিষ্যৎ চিšতায় এখনই এইশক্তির যথাযথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর এখনই হবে যথাপোযুক্ত সময়।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যাপক চাহিদা ও আগ্রহ আছে। তবে কিছুক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে অসুবিধা দেখা যায়। নিচেতা আলোচনা করা হল।
করতে হয় তার জন্য সুবিধাজনক জায়গা লাগে।
সৌরশক্তি নির্ভর নবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়া যায় সূেযর্র আলো থাকার ওপর, যার উৎপাদন বৃস্টির জন্য
ব্যাঘাত ঘটে।
অনেক সময় জলর জোয়ার-ভাটাকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহারের ফলে নদীর গতিপথ
পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়া নদীর উপর ব্রীজ বা ব্যারেজ নির্মাণে জাহাজ চলাচলও বাধাগ্রস্থ হয।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020