ভারতের গ্রামীণ এলাকায় শক্তির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে। গেরস্থ বাড়িতে রান্না আর আলো জ্বালানোর কাজে, কৃষি, শিল্প ও পরিবহণ ক্ষেত্রেই শক্তি বেশি ব্যবহার হয়। সব ধরনের শক্তি সম্পদই ভারতে রয়েছে। রয়েছে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস-ও। শক্তির সব চেয়ে বড় উৎস হল কয়লা। তার পরেই পেট্রোলিয়াম ও চিরাচরিত জৈবভর। দেশের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ শক্তি বা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পায় না। তা সত্ত্বেও দেশের শক্তি চাহিদার একটা বড় অংশ আমদানি করতে হয়, বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম। তা ছাড়া, শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপুল বৈষম্যও রয়েছে দেশে। ‘যাদের আছে’ আর ‘যাদের নেই’, গ্রাম এলাকা আর শহর এলাকা, পুরুষ আর নারী --- শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট ফারাক রয়েছে এদের মধ্যে। এই বিষয়গুলিই দেশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২১ কোটি ভারতবাসীর ৮৩.৩ কোটি বাস করেন গ্রামে, আর ৩৭.৭ কোটি শহরে। দেশ যদি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে চায়, তা হলে শক্তির লভ্যতা, শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা ও সঙ্গতির প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজও ২১ শতাংশ গ্রামে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি।
২০১২-১৩ সালে ভারতে শক্তির মাথাপিছু খরচের পরিমাণ ছিল ৬৭৪৮.৬১ কিলোওয়াট-আওয়ার। ২০১৪ সালের ৩১ জুলাইয়ের সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ২,৫০,২৫৬.৯৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তাপবিদ্যুৎ ৬৭.১৬ শতাংশ, জলবিদ্যুৎ ১৪.৮১ শতাংশ আর পরমাণু বিদ্যুৎ ১.৭৯ শতাংশ। অন্যান্য সূত্রে ১৬.২৪ শতাংশ।
এ বছর এপ্রিল থেকে জুলাই, এই তিন মাসে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেছিল ৫.১ শতাংশ। গত বছর এই সময়ে এই হিসাবটা ছিল ৬.৩ শতাংশ। চলতি আর্থিক বছরের (২০১৪-১৫) প্রথম ন’মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১,৪৮,১৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে উৎপাদিত হয়েছিল ১,৪০,৬৩৩ মেগাওয়াট। ফারাক ছিল ৭৫৩৩ মেগাওয়াটের।
গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মাথাপিছু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপুল ফারাক রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, রান্নার জন্য গ্রামে ৭৫ শতাংশ পরিবার জ্বালানি কাঠের উপর নির্ভর করে, ঘুঁটে ও কেরোসিনের উপর নির্ভর করে ১০ শতাংশ আর ১০ শতাংশ নির্ভর করে এলপিজির উপর। ও দিকে শহরাঞ্চলে রান্নার জন্য ২২ শতাংশ পরিবার নির্ভর করে জ্বালানি কাঠের উপর, ১০ শতাংশ কেরোসিনের উপর আর প্রায় ৫৭ শতাংশ এলপিজির উপর। বাড়িতে আলো জ্বালানোর জন্য গ্রামে ৪৪ শতাংশ পরিবার নির্ভর করে কেরোসিনের উপর আর ৫৫ শতাংশ বিদ্যুতের উপর। শহর এলাকায় এই হার যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ৯২ শতাংশ।
জ্বালানি কাঠ জোগাড় ও রান্না করতে মেয়েরা প্রতি দিন কাজের সময়ের ৪ ঘণ্টা খরচ করে। জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের কাজে জড়িয়ে থাকে শিশুরাও। গ্রামে যে শক্তি ব্যবহার হয় তার ৮০ শতাংশই মেলে জৈবভর থেকে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে ক্রমহ্রাসমান গাছপালার উপর বিপুল চাপ পড়ছে। প্রায় অকেজো চুলার ব্যবহার জ্বালানি কাঠ জোগাড়ে ব্যস্ত মহিলা ও শিশুদের একঘেয়েমি আরও বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া, ওই সব চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
আরও বেশি করে শক্তি সংরক্ষণ, শক্তির কর্মক্ষমতা আরও বৃদ্ধি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস থেকে আরও উৎপাদন স্বাভাবিক ভাবেই ভারতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাকে। আর বিভিন্ন সম্প্রদায়ও শক্তির দিক থেকে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
প্রায় পনের কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত আমাদের পশ্চিমবঙ...
আমরা বাড়িতে নানা ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার কর...
রান্নার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্য...