চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে, তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অন্য একটি প্রশ্নও এই সূত্রে উঠে যাচ্ছে। সুফল কি সত্যিই পাওয়া যাচ্ছে? জ্ঞানের সুফল মানে কি শুধু অন্যেরা যাতে সেই জ্ঞান চুরি করতে না পারে সেটুকুকে নিশ্চিত করা? না কি জ্ঞানের সুফল সেটাই যেটা অন্যকে যেমন সেই জ্ঞানের ভাগ দেয় তেমনি ভাগ দেওয়ার বিনিময়ে নিজেও কিছু অর্জন করে? চিরায়ত জ্ঞান ভাণ্ডারকে তাই বরং অন্যকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে এবং দেখতে হবে তার বিনিময়ে যেন জ্ঞানের যে বা যারা আদতে মালিক তারা কোনও সুবিধা পায়। জ্ঞানের এই আদানপ্রদানকে বলা হয় সুবিধার বণ্টন। এই জিনিস চালু হয়েছে ইতিমধ্যেই, দেশে এবং বিদেশে। তবে এ ক্ষেত্রেও একটি প্রশ্ন উঠেছে। চিরায়ত জ্ঞানের বাণিজ্যিক ব্যবহার থেকে যে লাভ হবে সেই লাভের ভাগ কে পাবে — যে জনগোষ্ঠী জ্ঞানটির আদত মালিক সে, নাকি সংশ্লিষ্ট দেশ। পেরু বা কলম্বিয়ার মতো কিছু দেশ লাভের ভাগ পুরোটাই সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে দিতে আগ্রহী। আবার ভারত চায়, এই লাভ সবটাই যাবে সরকারের ঘরে। যুক্তি এই যে, এই বিশাল দেশে অসংখ্য জনগোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনই আছে চিরায়ত জ্ঞানের এক বিপুল সম্ভার। কোন জ্ঞান কোন জনগোষ্ঠীর তা সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করাই মুশকিল। কারণ সরকার তো লাভটা দেশের মানুষের জন্যই খরচ করবে। এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অবশ্য আমাদের মাথাব্যথা নেই। বলার কথা একটিই, এই সব তুচ্ছ বিতর্ক যত দিন চলবে তত দিন জ্ঞানের সুবিধাটি ভোগ করবে উন্নত বিশ্ব, আর জ্ঞানের যারা আদত মালিক সেই বিকাশশীল দেশগুলি আঙুল চুষতে চুষতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে।
(লেখক আরামবাগ কলেজে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক)
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/18/2020