ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদের সম্ভাবনা ও উপযোগিতা জাতীয় ও রাজ্যস্তরে গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভেষজ উদ্ভিদের একটা গরিমাময় অবস্থান ছিল। এই সব উদ্ভিদজাত রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রত্যক্ষ ভাবে ওষুধরূপে তো ব্যবহৃত হতই, আবার প্রকৃতিজাত এই সব রাসায়নিক বস্তুর কাঠামোকে মডেল করে বৈজ্ঞানিকরা কৃত্রিম উপায়ে একই ওষুধ সংশ্লেষ করেছেন। এর ফলে ওষুধের দাম কমেছে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যার ফলে এক রোগ সারাতে গিয়ে আর এক রোগের সৃষ্টি হয়েছে। তাই উন্নত ধনী দেশগুলিতে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর মতো ওষুধের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক গাছগাছড়াজাত ওষুধের কদর বেড়েছে। নিজেদের দেশে এই সব গাছের ভাণ্ডার নিঃশেষিত হওয়ায় তারা নজর দিয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির দিকে যাদের প্রাকৃতিক ভাণ্ডার এখনও যথেষ্ট সম্পদশালী অথচ সচেতন বা উদ্যোগের অভাব ও আর্থিক অনটনের জন্য নিজেদের ঐতিহ্যরক্ষা করতে অপারগ বা উদাসীন। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের ঘরের গাছ নিম। আমাদের উদাসীনতার ফলে নিমগাছের অনেক কিছুর পেটেন্ট এখন বিদেশি বহুজাতিক সংস্থার হস্তগত। উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ফলে বিদেশের বাজার যেমন উন্মুক্ত হয়েছে তেমনি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। আমাদের অজ্ঞতা, উদাসীনতা ও নিশ্চেষ্টতার কারণে ব্যাপক ভাবে অরণ্য সম্পদ ধ্বংস হওয়ায় এই সব দুর্লভ উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিতই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে ধনী দেশগুলো নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদজাত রাসায়নিক দ্রব্যাদি খুঁজে বার করে সেগুলোকে নিজেদের কোম্পানির নামে পেটেন্ট করে নিচ্ছে। ভারত সরকারের ২০০২ সালের জীব বৈচিত্র্য আইন মোতাবেক ২০০৪ সালের নিয়ম দ্বারা উদ্ভিদ-বৈচিত্র্য এবং প্রাণী-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিধি স্বভূমিতে (ইন সিটু) এবং অন্যত্র (এক্স সিটু) প্রয়োগ একান্তে প্রয়োজন, এবং এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যিক। কারণ এই জীব বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়ে গেছে মানুষ ও তার পোষ্য প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য তুলনামূলক ভাবে সহজলভ্য, যথেষ্ট কম দামে ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভেষজের উৎস, যা মানুষ ও তার পোষ্য প্রাণীর স্থিতিশীল স্বাস্থ্যের সহায়ক।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/24/2020