দেহ মনে সংযোগ স্থাপন ও উন্নয়ন যোগাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য। যোগাসন অনুশীলনের প্রবণতা ও একনিষ্ঠ অভ্যাস এই উদ্দেশ্য পূরণের সহায়ক। নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসের ফলে আমাদের দেহের পুষ্টিসাধন হয়। কী ভাবে দেহে বিভিন্ন ক্রিয়া সাধিত হয়, কীসের মাধ্যমে কী ভাবে দেহ পুষ্টি লাভ করে, সেই দেহ সম্বন্ধে সামান্য কিছু প্রত্যেকের জেনে রাখা দরকার। মাংসপেশি, অস্থি, গ্রন্থি, স্নায়ু, লিভার, পাকস্থলী, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি দেহের কোন স্থানে কোনটির অবস্থান, কী রকম দেখতে, যা চোখে দেখা যায়, তা অ্যানাটমির মাধ্যমে জানতে পারি। সংক্ষেপে ছবির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, আমরা কী ভাবে শ্বাস গ্রহণ করি, যে খাদ্য খাই তা কী ভাবে দেহের পুষ্টি জোগায়, কী ভাবে রক্ত গঠন হয় এবং দেহে প্রবাহিত হয়, দূষিত পদার্থ কী ভাবে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। ফিজিওলজির মাধ্যমে এ সব বিষয়ে অবহিত হওয়া যায়। ফিজিওলজিতে দেহকে নয়টি সিস্টেমে ভাগ করা হয়েছে। শরীরের নয়টি দেহতন্ত্র বা সিস্টেমের কার্যক্ষমতা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালিত হয়ে দেহ নীরোগ ও প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ হয়। এই নয়টি দেহতন্ত্র ও তাদের কাজ এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসের ফলে এই সকল তন্ত্রের সুস্থতা ও দৃঢ়তা অক্ষুণ্ণ থাকে। শারীরিক, মানসিক পরিশ্রমে ও দুশ্চিন্তায় প্রতি দিন আমাদের যে জীবনশক্তি ক্ষয় হয় তা নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসে পুনরায় সঞ্চিত হয়। ফলে যোগাসন নীরোগ ও সবল দেহ, রূপ, যৌবন, আয়ু প্রভৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে, রক্তে হিমোগ্লোবিন ও অক্সিজেনের মাত্রা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায় বলে দেহের রোগ প্রতিষেধক শক্তি বাড়ে। দেহ জীবনীশক্তিতে পরিপূর্ণ হলে আলস্যমুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জন করে মানুষ শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করে।
যোগাসন সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক ও ব্যায়াম থেকে পৃথক এবং চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের পক্ষে সর্বোৎকৃষ্ট। দৈনিক যোগাসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে। এতে মেরুদণ্ডে ছয়টি স্নায়ুকেন্দ্রে প্রবল জীবনীশক্তি সঞ্চারিত হয়। মনে গভীর আত্মপ্রত্যয়, আনন্দ এবং সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সঞ্চারিত হয়। আলাদা করে ওষুধ খাবার দরকার হয় না। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের পক্ষে যোগাসন একান্ত বাঞ্ছিত কল্পতরু।
ব্যধির মন্দির যেন, এই মানব শরীর
নিরাময়ে যোগ করো, না হয়ে অধীর।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/19/2020