অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

কর্তব্য পালনের উজ্জ্বল নজির জুনিয়র ডাক্তারের

কর্তব্য পালনের উজ্জ্বল নজির জুনিয়র ডাক্তারের

এনআরএস হাসপাতালের হস্টেলে পিটুনিতে কোরপান শাহের মৃত্যুর ঘটনা জুনিয়র ডাক্তারদের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে যখন বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে, ঠিক তখনই এক চিলতে উজ্জ্বলতার আভাস দিল বাঙুর হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তারের ‘কর্তব্যবোধ’। যাতে ‘প্রভাবিত’ তাঁর সিনিয়র দাদারাও। পচে পোকা ধরে যাওয়া জরায়ুর চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে আসা এক বৃদ্ধার ছোঁয়াচ বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার, তখন স্বেচ্ছায় গিয়ে তাঁর শুশ্রূষার দায়িত্ব নিলেন ওই তরুণ চিকিৎসক উজ্জ্বল বটব্যাল।

কুঁদঘাটের বাসিন্দা, ৮০ বছরের আঙুরবালা দাসের জরায়ু শরীর থেকে বেরিয়ে এসে অনেকটা ঝুলছিল। ডাক্তারি পরিভাষায় ‘প্রোল্যাপসড ইউটেরাস’। জরায়ুর ওই ঝুলে থাকা অংশে থিকথিক করছিল সাদা পোকা। যেখানেই হাঁটছেন বা বসছেন, সেখানে ভরে যাচ্ছে পোকায়। তীব্র দুর্গন্ধে সবাই ছিটকে যাচ্ছেন দূরে। এ ছাড়া, মূত্রথলির একটি বড় অংশও বেরিয়ে আসায় যখন-তখন প্রস্রাব হয়ে যাচ্ছিল তাঁর।

বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আঙুরবালাদেবীর নাতিরা তাঁকে নিয়ে আসেন এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে ইমার্জেন্সিতে পৌঁছলে অন্য রোগীরা চিৎকার করে তাঁকে তৎক্ষণাৎ অন্যত্র সরানোর দাবি করেন। আঙুরবালাদেবীর জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভাবে স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা লেবার রুমে নিয়ে রোগিণীকে পরীক্ষা করেন। এ ক্ষেত্রে লেবার রুমে তাঁকে ঢোকাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রসূতিরা। তাঁর শরীর থেকে বেরোনো পোকা প্রসূতি ও তাঁদের সদ্যোজাতদের ক্ষতি করতে পারে, এই আশঙ্কায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বার করে আনেন।

তার পর থেকে বারান্দার কোণেই পড়েছিলেন তিনি। যাতায়াতের পথে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ডাক্তার-নার্সরা সন্তর্পণে তাঁকে এড়িয়ে যেতেন। এড়িয়ে যাননি জুনিয়র ডাক্তার উজ্জ্বল বটব্যাল। তিনি স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক নন। সুতরাং সরাসরি তাঁর দায়ও ছিল না। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র ডাক্তার উজ্জ্বল কিন্তু দায়টা স্বেচ্ছায় নিলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বারান্দার ধারে বসে শুশ্রূষা শুরু করেন আঙুরবালাদেবীর।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ওই ধরনের পোকা সাধারণত ইথার ঢেলে মারা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পোকা জরায়ুর ভিতরেও থাকায় ইথার ঢালা যায়নি। তাতে পেটের একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। বরং প্যাডে ইথার ভিজিয়ে জরায়ুর বেরিয়ে আসা অংশে জড়িয়ে রাখতেন উজ্জ্বল। কয়েক ঘণ্টা অন্তর প্যাড বদলানো হত। তাতেই হুড়হুড় করে পোকা বেরিয়ে এসে মারা যেত। ক্ষতস্থানেরও পরিচর্যা করতেন তিনি। এই দেখে শেষে এগিয়ে আসেন স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা। ওই বিভাগের চিকিৎসক অনিমেষ দাশগুপ্তের উদ্যোগে অপারেশন থিয়েটারে এনে ইথার ও হাইড্রোজেন পারক্সাইড দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করে পচা টিস্যু কেটে ফেলার ব্যবস্থা হয়।

অনিমেষবাবু বলেন, “প্রাথমিক ঝুঁকিটা কেটেছে। অবস্থা খানিকটা স্থিতিশীল করে জরায়ু বাদ দেওয়ার চেষ্টা করব। তা না হলে জরায়ুটি ভিতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হবে।” আর উজ্জ্বল বলেন, “এক জন চিকিৎসকের কর্তব্য, তা-ই করেছি। এর বাইরে কৃতিত্ব নেওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। তা ছাড়া সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, সহকারী সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায় এবং নার্সরা— অনেকেই তো পাশে ছিলেন।”

বাঙুরের জুনিয়র ডাক্তারদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, কোরপান শাহের মর্মান্তিক পরিণতি বা কয়েক মাস আগে পিজি-র হস্টেলে মাদক খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা জুনিয়র ডাক্তারদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। কিন্তু সেটাই যে একমাত্র সত্য নয়, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “উজ্জ্বলরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। হতাশ হওয়ার সময় এখনও আসেনি।”

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate