অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে চমক বাঙালির, বাজারে আসতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি

যেন একটা কফির কাপ! আর সেটা দিয়েই কিডনির কাজটা হয়ে যাবে! আর সেই কফির কাপটাকে বসিয়ে দেওয়া যাবে শরীরের ভেতরেই!

বিগড়ে যাওয়া দু’টি কিডনি বাদ দিতে হলে আর নতুন দু’টি কিডনি পাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ প্রতীক্ষায় বসে থাকতে হবে না। হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না দোরে দোরে। কিডনি পাচারচক্রেরও পাল্লায় পড়তে হবে না।

গত সাত বছরের লাগাতার চেষ্টার পর শেষমেশ কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে ফেললেন এক বাঙালি বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার। সানফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শুভ রায়। ট্যাঙ্কার ফাউন্ডেশনের গুণীজন সংবর্ধনার বার্ষিক অনুষ্ঠানে, গত শুক্রবার শুভ ও তাঁর সহযোগী গবেষকদের ওই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, আর বছর দু’-তিনেকের মধ্যেই আমেরিকার বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে এসে যাবে ওই কৃত্রিম কিডনি।

ইউরোপ সহ বিশ্ব বাজারেও সেই কৃত্রিম কিডনি আসতে দেরি হবে না। শুভদের বানানো কৃত্রিম কিডনি এখন শীর্ষ মার্কিন সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)-এর অনুমোদনের অপেক্ষায়।

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে সানফ্রান্সিসকো থেকে ই-মেলে কলকাতার সন্তান, বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার শুভ রায় লিখেছেন, ‘‘তলপেটে যেখানে শরীরের দু’পাশে আমাদের দু’টি কিডনি রয়েছে, সেখানেই যে কোনও এক দিকে ওই কফির কাপের মতো কৃত্রিম কিডনিকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। তাকে চালাবে হার্ট থেকে আসা রক্তই। তবে সেই রক্তকে ফিল্টার করে নেবে ওই কৃত্রিম কিডনি। নজর রাখবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলি শরীরে ঠিক ভাবে তৈরি হয় আর সংশ্লিষ্ট গ্রন্থিগুলি (গ্ল্যান্ডস) থেকে সেই হরমোনগুলির ক্ষরণ হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে। শুধু তাই নয়, শরীরে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটাও করবে ওই কৃত্রিম কিডনি।’’

স্বাভাবিক কিডনির সঙ্গে ফারাকটা কোথায় এই কৃত্রিম কিডনির?

শুভ বলছেন, ‘‘হিমো-ডায়ালিসিসের যে চালু পদ্ধতি রয়েছে, তাতে আমাদের শরীরের দু’টি কিডনি বয়ে চলা রক্তস্রোত থেকে শুধুই বিষ বা দূষিত পদার্থগুলিকে ছেঁকে (ফিল্টার) বের করে নেয়। কিন্তু শরীরে বসানো ওই কৃত্রিম কিডনির গায়ে আলাদা একটি ‘মেমব্রেন’ বা স্তর (লেয়ার) থাকবে। সেটা খুব ভেবে-চিন্তে রক্তস্রোত থেকে বিষ বা দূষিত পদার্থগুলিকে বেছেবুছে নেবে। তার সঙ্গে থাকবে একটি বায়ো-রিঅ্যাক্টরও। সেই বায়ো-রিঅ্যাক্টরটা বানানো হয়েছে কিডনির সুস্থ, সবল কোষগুলি দিয়ে। সেগুলিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ডায়ালিসিসের সময় রক্তস্রোতের সামনে থাকবে। এটা স্বাভাবিক কিডনির চেয়ে অনেক দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে ডায়ালিসিসের কাজটা করতে পারবে আমাদের শরীরে।’’

কী ভাবে কাজ করবে কৃত্রিম কিডনি ও তার অংশগুলি

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ফি-বছর ভারতে কম করে আড়াই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির অসুখে। আর কিডনির সেই অসুখগুলির জন্য মূলত দায়ী দু’টি জিনিস। ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে কিডনির অসুখে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের অন্তত ৮০ শতাংশেরই মৃত্যুর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডায়াবেটিস আর হাইপার-টেনশন। কিডনির অসুখে ভুগে মৃত্যুর ঘটনা ভারতে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে তামিলনাড়ুতে। কিডনির অসুখে আক্রান্তের সংখ্যাতেও দেশের অন্য রাজ্যগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে তামিলনাড়ু। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬-র মে মাসের মধ্যে শুধু তামিলনাড়ুতেই ২ লক্ষ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষের ডায়ালিসিস করতে হয়েছে। যার জন্য ওই রোগীদের মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। ডায়ালিসিস ছাড়াও তামিলনাড়ুতে কিডনির পাথরের চিকিৎসা হয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কিডনির প্রতিস্থাপন হয়েছে কম করে ৫০ হাজার রোগীর।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা?

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর অধিকর্তা বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট সৌম্য স্বামীনাথন বলছেন, ‘‘কিডনির অসুখ একেবারে সেরে যায়, এমনটা নয়। আমাদের শরীরের বিগড়ে যাওয়া কিডনি দু’টিকে ‘কাজ চালানোর গোছের’ রাখতে ডায়ালিসিস করাতে হয়। এক বার ডায়ালিসিস করলে হয়তো কিছু দিন সেই বিগড়ে যাওয়া কিডনি দু’টিকে দিয়ে ঠিকঠাক ভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু তার পর আবার ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়। বার বার ডায়ালিসিস করানো বা কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ এখনও ভারতে সাধারণ মানুষের প্রায় নাগালের বাইরেই রয়েছে। সমস্যাটা আরও জটিল হয়ে ওঠে কিডনির অসুখের চরম পর্যায়ে। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে, ‘এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজ’ (ইএসআরডি)। সেটা কী জিনিস? যখন আমাদের শরীরের কিডনি দু’টি রক্তস্রোত থেকে আর সবটুকু বর্জ্য পদার্থ (ওয়েস্ট প্রোডাক্ট) ও বাড়তি তরলটুকুকে ছেঁকে নিতে পারে না।

তখন রোগীকে বার বার ডায়ালিসিস করিয়ে সাময়িক ভাবে কিডনি দু’টিকে সচল রাখা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে রোগীকে সপ্তাহে কম করে তিন বারও ডায়ালিসিস করানোর প্রযোজন হয়ে পড়ে। যার খরচ প্রচুর। শুধু তাই নয়, বিগড়ে যাওয়া কিডনি বা কিডনি দু’টিকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় প্রতিস্থাপনের জন্য সুস্থ, সবল কিডনিও চট করে পাওয়া যায় না। গত মাসেই শুধু তামিলনাড়ুর সরকারি হাসপাতালগুলিতে অন্তত হাজার তিনেক মানুষকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। কারণ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রতিস্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কিডনি নেই। ফলে, রোগীদের পড়ে যেতে হয় অবৈধ কিডনি পাচারচক্রের হাতে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে কৃত্রিম কিডনি এলে শুধু যে রোগীরাই উপকৃত হবেন, তা নয়। আমরা ডাক্তাররাও নিশ্চিন্ত বোধ করব।’’

কত দাম হতে পারে কৃত্রিম কিডনির?

বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার শুভ রায় বলছেন, ‘‘একেবারে সঠিক দাম এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে আর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে বিপুল খরচ হয়, তা অনেকটাই কমে যাবে কৃত্রিম কিডনি শরীরে বসানো গেলে।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/6/2024



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate